সিলেট: প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্য ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালালের প্রয়াণের পর সিলেট নগরের নাইয়রপুল থেকে গিলাফ নিয়ে এসেছিলেন সৈয়দ ওমর সমরখন। তখন থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী হযরত শাহজালালের মাজারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বার্ষিক ওরস মোবারক। সেই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে শাহজালাল (রহ.)-এর ৭০৬ তম বার্ষিক ওরস।
রোববার (১৮ মে) সকাল থেকে গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের আনুষ্ঠানিকতা। এতে মাজার প্রাঙ্গণে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত আশেকানদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রতিবছর ভক্তদের অশ্লীল নাচ, গান ও গাজার আসর বসলেও এবারের ওরসে প্রথা ভেঙে বেদআত ও শিরকমুক্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবার মাজারের পেছনে ভক্ত-আশেকানদের আসর বসার অনুমতি দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পবিত্র মাজার প্রাঙ্গণে অসামাজিকতা ও অশ্লীলতা বন্ধ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। মাজারের পবিত্রতা বজায় রাখতে সিলেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে প্রশাসন।
প্রতিবছর আরবি মাসের ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী হযরত শাহজালাল (র.) এর ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকানরা গরু-খাসি নিয়ে আসেন। এসব গরু, খাসি রান্না করে হাজার হাজার ভক্তকুল ও মুসাফিরদের মাঝে শিরনি বিতরণ করা হয়।
শাহজালাল মাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভিড় জমিয়েছেন মাজারের ভক্ত-অনুরাগীরা। দলে দলে প্রবেশ করছেন মাজারে। চারপাশে ‘লালে লাল, বাবা শাহজালাল’ স্লোগানে মুখর মাজার এলাকা। মাজারের পেছনে একটি জায়গায় বসে ভক্তদের মিলাদ পড়তে দেখা গেছে। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় অস্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপন ছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে, গত শুক্রবার মাজার এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম। তিনি মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এ বছর শিরক ও বিদআতমুক্ত ওরস সম্পন্ন হবে। ভক্তদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাজার প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে মাজার প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামাজ ছাড়া মাজারে যাতে কেউ সেজদা না দেন, শিরক -বেদাতমূলক কাজে জড়িত না থাকেন এ লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাজার আঙিনায় পোস্টার স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নারীরা পর্দার সঙ্গে অবস্থান করবেন। তাছাড়াও কেউ যেন মদ-গাঁজার আসর না বসান সে বিষয়টি তদারক কমিটি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখবে।’