Monday 19 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কেউ আপস করবে?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২৫ ১৬:০২ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৭:১৪

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

ঢাকা: দলের শীর্ষ নেতারা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কেউ আপস করতে পারবে না— এমন অঙ্গীকার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সোমবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবার্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘কেউ কেউ প্রচারের চেষ্টা করছে, আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাস করতে চাই। ভাবেন একবার! যে দলটা, যেই দলের সরকারটা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে বিএনপিকে। সবচেয়ে বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, খুন করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে ছয়টা বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছে। বিএনপির মহাসচিবসহ এমন কোনো নেতা নাই, যার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টা মামলা নাই।’’

‘‘আমিও নিজেও কারাগারে ছিলাম। আমাকে যখন বাসা থেকে নিয়ে যায়, তখন আমার স্ত্রীকে অক্সিজেন দিয়ে বাসায় রেখেছে। সেই অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ডিবিতে ফ্লোরে ফেলে রেখে ময়লা কম্বলের ওপরে। আর আমাদের বলা হয় আমরা নাকি আওয়ামী লীগের পুনর্বসান করব, আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকব। এই ফাজলেমির কোনো মানে হয়? এটা কি সম্ভব? আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস কেউ করবে?’’— বলেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার প্রস্তাব করেছে, তার কোনোটাই আমাদের ৩১ দফার বাইরে নয়। সব তার মধ্যেই। বরঞ্চ ৩১ দফার বাইরে আরও কিছু সংস্কার প্রস্তাব আছে, যেগুলো আমরা যে দাবি আকারে উত্থাপন করি নাই। আমরা এটাকে আমাদের প্রতিশ্রুতি আকারে উত্থাপন করেছিলাম। জনগণের সমর্থনে যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই, তাহলে কোনো সংস্কার কমিশন বা অন্য কোনো সংস্কার প্রস্তাব যদি নাও থাকে, আমরা সেই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ— এটাই ছিল আমাদের ঘোষণা।’’

বিজ্ঞাপন

‘‘কাজেই, যদি কেউ বলে বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে, অথবা সংস্কার চায় না, তাহলে তারা মিথ্যা বলে, তারা মতলবী কথা বলে। কারণ, তারা তো কেউ চায়নি। আমরা বলেছি যে, প্রধানমন্ত্রী পদে পরপর দুই বারের বেশি কেউ থাকতে পারবে না। আমাদের আগে আর কেউ বলেছে এ কথা? আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি, আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যা আনার কথা বলেছি। আমাদের আগে আর কেউ বলেছে এ কথা?’’— প্রশ্ন রাখেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধু রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী কথা বলছি না। আমরা বলেছি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনসভা এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলেছি আমরা। কারণ, আমরা চেয়েছি, রাষ্ট্রটা ভালো চলুক। এখানে কেউ যেন এত বেশি ক্ষমতার অধিকারী না হয়, যাতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং একটা জিনিস পরিষ্কার বিএনপি বা ১২ দলীয় জোট— আমরা কেউ সংস্কারের বিপক্ষে নই।’’

‘‘কিন্তু আমরা যেটা বলি, সেটা হল কোনো এক সরকারের পক্ষে সব সংস্কার করা সম্ভব না। সংস্কার এমন একটা ধারাবাহিক, অনিবার্য বাস্তবতা, যেটা কেউ না চাইলে তাকে করতে হবে। করতেই হেব’’— বলেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘‘যেমন ধরেন আপনি যদি গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। প্রথমে আপনি ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন। কালকে যখন আপনি বিয়ে করবেন, তখন আপনারা রুমটা কি ওভাবে থাকবে? বদলে যাবে না? তারপর যখন আপনার সন্তান হবে, তখন কি ওভাবেই থাকবে, নাকি কিছু পরিবর্তন করতে হবে? সন্তান যখন বড় হবে, তখন আবার পরিবর্তন করতে হবে না? এটা অনিবার্য পরিবর্তন। এটা আপনি চাইলেও এড়াতে পারবেন না। আপনাকে করতে হবে। প্রয়োজন, সামর্থ এবং অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে। সংস্কারটাও এমন এক বিষয়, যেটা প্রয়োজনের তাগিদে অবশ্যই আপনাকে করা লাগবে। কিন্তু, সেটা করতে হবে আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী,সামর্থ্য অনুযায়ী।’’

বিজ্ঞাপন

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা বলেছি বেশ কিছু সংস্কার আছে, যেটা সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া হবে না। আর এই সরকারের পক্ষে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নাই। দেশে সামরিক শাসন জারি করে সংবিধান স্থগিত করতে হবে, তাহলে আপনি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবেন। আর না হলে পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা বলেছি এটা ছাড়া আর যেসব পরিবর্তন বিটুইন টু পার্লামেন্ট, দুই পার্লামেন্টের মাঝে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। আমরা যেসব ব্যাপারে একমত হব, যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যায়, সেগুলো করে ফেলেন। যেগুলো করা যাবে না, সেগুলো সনদ আকারে লিপিবদ্ধ হোক। আগামী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় যাবে তারাই এটার অনুমোদন করবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন। গতকালও ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ বলেছে, ‘আমাদের আলোচনা প্রায় শেষ। আমরা এই মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় যাব’। অর্থাৎ আরও একটু আলোচনা করে একটা সনদ তৈরি করা, যেটাতে আমরা সবাই দস্তখত করব। সেটা করতে আর কত দিন লাগবে? ম্যাক্সিমাম এক মাস, দেড় মাস! এর বেশি তো না। এরপর অধ্যাদেশ এক সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। তাহলে আপনার নির্বাচন ডিসেম্বরে করতে বাধাটা কোথায়? আপনারা যা বলছেন, তাতেই তো কোনো বাধা নাই।’

‘‘এখন যদি বলেন, আরও দেরি করতে হবে, তাহলে তো কারণটা বলতে হবে, কেন দেরি করতে হবে? তা তো বলছেন না তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এখন কারণ, যদি গোপন থাকে যে, আপনার সংঘটিত হতে একটু সময় লাগবে, কিম্বা আপনি কারও কারও সঙ্গে একটু জোটের চেষ্টা করছেন? সেই জোটটটা বানাতে একটু সময় লাগবে। একটা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ, আপনার সংঘটিত হওয়ার স্বার্থে সেটা থেকে বঞ্চিত রাখবেন, এটা কি যুক্তি সঙ্গত ‘’— প্রশ্ন নজরুল ইসলাম খানের।

তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। যেসব সংস্কার প্রয়োজন, যেসব সংস্কার সম্ভব, যেসব সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না, এর সবগুলো আমরা করতে চাই। আমরা এটাও চাই, যত দ্রুত সম্ভব জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে। আমি মনে করি আমাদের এ আকাঙ্ক্ষায় কোনো ত্রুটি নাই। এ আকাঙক্ষা ন্যায্য।’’

সারাবাংলা/এজেড/এসআর

নজরুল ইসলাম খান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর