Monday 19 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকার চলছে এডহক ভিত্তিতে
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা জোর দিয়ে বলতে পারছি না: ড. দেবপ্রিয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২৫ ১৬:১৯ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৬:৩২

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য – (ফাইল ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বিশিষ্ট সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলায় তারা এখনো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারে নাই। আমরা এমন ধরণের কাঠামোগত রূপান্তর বা ইক্যুইটি-বিরোধী পক্ষপাত হ্রাস দেখতে পাচ্ছি না, যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অর্থবহ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা এখন জোর দিয়ে বলতে পারছি না।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র্য বাড়ছে- এটা বলাবাহুল্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি আমরা পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে দেখা যায় যে, তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে, ঋণ প্রবাহ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, এডিআই কমেছে ও পুঁজিবাজারের সকল সূচক নিম্নমুখী। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? বেকারত্বে হার বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

তিনি বলেন, সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে এডহক ভিত্তিতে। যে ফিসক্যাল পলিসি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটা গত সরকারের। পুরানো যে কাঠামো রয়েছে সেটাকেই ধুয়ে-মুছে কাজ করা হচ্ছে, সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করার সুপারিশ করা হয়েছিল। টাস্কফোর্সের যে সুপারিশ ছিল, সেটা ধরে যে গতি আসার কথা ছিল, তা আমরা দেখতে পাইনি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টি মুদ্রানীতিতে এখনও প্রতিফলিত হয়নি। মূল্যস্ফীতির হার ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগন্যাল পাবো। এদিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি, অর্থাৎ তাদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে আছে। এটা বাড়াতে হবে। আগামী অর্থবছরেও ১০ এর নীচে থাকছে।

বিজ্ঞাপন

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে খুব কম মনোযোগ দিয়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে, অন্য কোনও সংস্কার টেকসই হবে না। কাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্বল শাসনব্যবস্থা অর্থনৈতিক সংস্কারকে জর্জরিত করছে। মূল্যস্ফীতি সামান্য হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টার মতো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কিছু লক্ষণ থাকলেও বাংলাদেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ কাঠামোগত দুর্বলতা এবং শাসন ত্রুটির কারণে ব্যাহত হচ্ছে।

দেশের আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চোরতন্ত্রে ছিলেন আমলারা, ব্যবসায়ীরা আর রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ, আর আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরুজ্জীবিত।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাস্কেট কেস ধরণের পুরনো নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। একইসঙ্গে স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

সারাবাংলা/আরএস

ড. দেবপ্রিয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর