ঢাকা: গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জনগণ আর কতদিন অপেক্ষা করবে— এমমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা-সাবভৌমত্ব সুরক্ষা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে শফিউল আলমের ভূমিকা’- শীর্ষক এ আলোচনা আয়োজন করে জাগপা।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গর্বিত জনগণ আমরা। যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছি, যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছি এবং এখনো আমরা গণতন্ত্রের প্রত্যাশায় বসে আছি। সেই গণতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলছি, শ্লোগান দিচ্ছি, সভা-সমাবেশ করছি। কত দিন, কত বার আমাদেরকে এই কাজ করতে হবে?”
তিনি বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়ের প্রাইমারি স্কুলে পড়েৃ পরিশ্রম করে হাই স্কুলে যায়, হাইস্কুলে পড়াশুনা করে কষ্ট করে কলেজে যায়, সেখানে পড়াশুনা করে ইউনির্ভাসিটিতে যায়। আর আমাদেরকে এই বাংলাদেশের জনগণকে বারবার সেই সাপ-লুড়ু খেলার মতো ৯৩ থেকে ৩ এ চলে আসতে হইতেছে। কেন? আমরা ৯৩ থেকে ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭ কইরা ১০০ তে পৌঁছেতে চাই। এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে আমরা তাদের ওই সাপ খেলা লুডুর সাপ বলে মনে করি।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘তারা আমাদেরেকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে আসছে। নানা রকমের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য। এটা করতে হবে আগে, ওটা করতে হবে আগে। আগে-পরে করার প্রশ্ন তো নাই। যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘আমি যেটা বলতে চাই যে, ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর ছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা তাদের সঙ্গে ছিল, তাদের সবার বিচার অবশ্যই করতে হবে। কারণ তারা আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে, আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে, আমার সহকর্মীর বিরুদ্ধে, আমার দেশবাসীর বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। অবশ্যই বিচার চাই। কিন্তু, সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করা যাবে না। এই প্রশ্ন যারা তোলে তারা আসলে এই কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘তিন দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে, সাত দিন বা দশ দিন বা এক মাসের মধ্যে বিচার করতে হবে— এটা করা উচিত? সুবিচারের জন্য এই শব্দটা কি ভাল? বিচার অবশ্য্ই করতে হবে। কত দিন আগে আমরা লিখিতভাবে সরকারকে বলেছি। আমরা বলেছি আরেকটা ট্রাইব্যুনাল করেন। একটা ট্রাইব্যুনালে হবে না। এত বেশি লোকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে।
‘‘করে না, করে না, করতে করতে কয়েকদিন আগে করল। এখন পর্যন্ত সেটা কার্য্কর হয় নাই। দোষটা কার? আমাদের? ইনভেস্টিগেশন অফিসার নাই। আরও অফিসার দিতে হবে। সেটা করা হচ্ছে না, বিলম্ব করা হচ্ছে। আসল উদ্দেশ্যটা কী’’— প্রশ্ন নজরুল ইসলাম খানের।
তিনি বলেন, ‘‘এই যে সংস্কার এবং নির্বাচনকে সামনা সামনি করে দেওয়া হয়েছে, এটা আরেকটা অপরাধ, এটা ভুল। আরে ডেমোক্রেসি ইট সেলফ ইজ এ রিফর্ম। এর আগে রাজতন্ত্র ছিল, এর আগে সামন্তবাদ ছিল। গণতন্ত্র যে এসেছে এটাও তো একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে এসেছে, একটা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে এসেছে। আর সেই গণতন্ত্র সারা দুনিয়ায় অনেকভাবে কার্য্কর। আমেরিকায় যেভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয় ইংল্যান্ডে সেভাবে হয় না। ফ্রান্সে যেরক কার্য্কর হয় ভারতে সেভাবে হয় না, নেপালে যেরকম হয় বাংলাদেশে সেরকম হয় না। একেক দেশে একেকভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয়। কাজেই সংস্কার আর গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী না.. এটা পরিপূরক। সেজন্যই আমরা বলি, বিচারও হতে হবে, সংস্কারও হতে হবে, নির্বাচনও হতে হবে এবং সবই যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে।”
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি এম এ ওহাবের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির কারী আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জাগপার প্রেসিডিয়াম মেম্বার খন্দকার আবিদুর রহমান, আসম মিজবাহ উদ্দিন, রকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না, কেন্দ্রীয় নেতা আওলাদ হোসেন শিল্পী, আনোয়ার হোসেন, রোকন উদ্দিন হাজারী, ঢাকা মহানগরের সভাপতি হোসেন মোবারক, সাধারণ সম্পাদক এম এ শাহীন প্রমুখ।