Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এআই তথ্যের গতি বাড়িয়েছে, কিন্তু ঝুঁকিও এনেছে: অড্রে আজুলে

বেলজিয়াম থেকে ফিরে ফারহানা হক নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ১০:০৩

ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে । ছবি: সারাবাংলা

বেলজিয়াম: তথ্যের গতি ও প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিতরণ ও প্রচারের গতি বিপুলভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটি কখনো ইতিবাচক হলেও, প্রায়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তিনি বলেন, এআই তথ্যের গতি বাড়িয়েছে, কিন্তু ঝুঁকিও এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপ্লব ঘটিয়েছে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে। ফলে তথ্য আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই গতি শুধু সুবিধা নয়, অনেক সময় বিপদও ডেকে আনছে।

বিজ্ঞাপন

গত ৭ মে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকো আয়োজিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অড্রে আজুলে সতর্ক করে বলেন, ‘আজকের ডিজিটাল যুগে অ্যালগরিদম আমাদের এমন এক তথ্য বৃত্তে বন্দি করে রেখেছে, যেখানে আমরা শুধু আমাদের মতের সঙ্গে মিল থাকা তথ্যই পাই। ফলে সমাজে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্রতর হচ্ছে এবং চরমপন্থা বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য যদি গণকল্যাণের জন্য হয়, তবে তা সকলের নাগালের মধ্যে, সঠিক, বৈচিত্র্যময় ও সত্যভিত্তিক হতে হবে। একচেটিয়া বা পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য সমাজে বিভ্রান্তি ও বিভাজন তৈরি করে।’

আজুলে বলেন, ‘তথ্যকে একটি জনগণের সম্পদ হিসেবে রাখতে হবে। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে সাংবাদিকতার পেশাদার নৈতিকতা ও মানব বিচারবোধের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষায় তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার তুলে ধরেন।

প্রথমত, স্বাধীন গণমাধ্যমের অর্থনৈতিক টেকসই অবস্থান। স্বাধীন গণমাধ্যমের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করা টিকে থাকার জন্য একটি দৃঢ় আর্থিক ভিত্তি অপরিহার্য। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই রাজনৈতিক বা করপোরেট চাপে প্রভাবিত হতে পারে, যা সংবাদে নিরপেক্ষতা ও সত্যনিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সহায়তাও হতে পারে, তবে তা যেন কোনোভাবেই সম্পাদকীয় নীতিতে হস্তক্ষেপ না করে। আর্থিক স্বচ্ছতা ও টেকসই মডেলের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়ত, মিডিয়া সাক্ষরতা। সাধারণ জনগণ ও কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে মিডিয়া সাক্ষরতা বাড়াতে হবে। আজকের ডিজিটাল যুগে এটি অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে মানুষ ভুয়া খবর, গুজব ও প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।

তৃতীয়ত, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্বচ্ছতা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সংবাদ বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গণতন্ত্র ও তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষায় অপরিহার্য। অনেক সময় অ্যালগরিদমভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে কী খবর পৌঁছাবে, তা গোপন নিয়মে নির্ধারিত হয়, যা পক্ষপাতদুষ্টতা ও ভুল তথ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত তাদের কন্টেন্ট মডারেশন নীতি, অ্যালগরিদমের কার্যপ্রণালী এবং স্পন্সর কনটেন্ট সম্পর্কে খোলাখুলি তথ্য প্রকাশ করা।

আজুলে উল্লেখ করেন যে, বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই সংবাদ কনটেন্ট ব্যবহার করে তাদের ভাষার মডেল প্রশিক্ষণ দেয়। কিন্তু সংবাদ প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণ দেয় না। তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সেমিনারে তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে ইউনেসকোর দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্থিক অংশীদার, যা বৈশ্বিক অস্থিরতার এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও তথ্যের উন্মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিতে সহায়ক।’

এই আলোচনায় স্পষ্ট যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তার যেমন সাংবাদিকতাকে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি এটি সাংবাদিক ও তথ্যের স্বাধীনতার ওপর নতুন ঝুঁকিও তৈরি করেছে। তথ্য যেন সব নাগরিকের অধিকার হয় এবং সংবাদমাধ্যম যেন মুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারে— বিশ্ব এখন এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

অড্রে আজুলে এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গতি বাড়িয়েছে ঝুঁকিও এনেছে