ঢাকা: আমরা যখন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আরাম করে বসে পড়ি, কখনো কি ভেবেছি —এই চায়ের পেছনে আছে শত বছরের ইতিহাস, বাণিজ্য, আন্দোলন, সংস্কৃতি, এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত! বুধবার (২১ মে) বিশ্ব চা দিবস— এমন একটি দিন যেটা শুধু চায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে চা উৎপাদন ও এর সঙ্গে জড়িত পেছনের মানুষগুলোর গুরুত্বও অপরিসীম।
চায়ের ইতিহাস: হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য
চায়ের ইতিহাস শুরু চীনে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। কিংবদন্তি অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩৭ সালে চীনা সম্রাট শেন নাংয়ের পানির পাত্রে একটি চা গাছের পাতা পড়ে, আর সেখান থেকেই চা আবিষ্কৃত হয়। পরে এই পানীয় ছড়িয়ে পড়ে জাপান, কোরিয়া, ভারত ও ইউরোপে।
১৬০০ শতকে ব্রিটিশদের হাত ধরে চা পৌঁছে যায় ইউরোপে। ব্রিটিশরা ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বিশাল চা বাগান তৈরি করে। বাংলাদেশেও বৃটিশ শাসনামলেই চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়, বিশেষ করে ১৮৫৭ সালে মালনীছড়া চা বাগান দিয়ে।
বিশ্ব চা দিবস: কীভাবে শুরু হলো?
বিশ্ব চা দিবস প্রথম চালু হয় ২০০৫ সালে, দক্ষিণ এশিয়ার চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর উদ্যোগে। তখন দিবসটি পালিত হতো ১৫ ডিসেম্বর, ভারতের দিল্লিতে প্রথম উদযাপন হয়। পরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১৯ সালে ২১ মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক World Tea Day হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য
- চা উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের অধিকার ও অবদানের স্বীকৃতি
- চা শিল্পের টেকসই উন্নয়ন
- আন্তর্জাতিকভাবে ন্যায্য মূল্যের গুরুত্ব তুলে ধরা
- চা খাতের পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিক অবদান তুলে ধরা
বাংলাদেশ ও চা: এক অমলিন সম্পর্ক
বাংলাদেশ চা উৎপাদনে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় অঞ্চলে বিস্তীর্ণ চা-বাগান রয়েছে। দেশে প্রায় ১ লাখের বেশি শ্রমিক এই শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত, যাদের বেশিরভাগই নারী।

বাগান থেকে চা পাতা তুলছেন নারী শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত
চা শুধু আমাদের পণ্যের তালিকায় নেই, এটা আমাদের আতিথেয়তার অংশ, আমাদের প্রতিদিনের জীবনের গল্প। অতিথি এলে “এক কাপ চা খাবে?”—এই প্রশ্নে যেন সম্পর্কের শুরু।
বিশ্ব চা দিবসে চায়ের স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি আমরা যদি একটুখানি কৃতজ্ঞতা জানাই সেই শ্রমিকদের, যারা পাহাড়ি পথ বেয়ে, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে চা-পাতা তুলছেন—তাহলেই এ দিবসের মূল্যায়ন হয়।