Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যমুনায় পানি বেড়েছে, ভূঞাপুরে তীব্র নদী ভাঙন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ১৩:১৯ | আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ১৬:০২

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। অসময়ে এই ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

গত এক সপ্তাহ ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনা পূর্ব পাড়ের জিগাতলা, রামপুর ও গোপীনাথপুর এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। যমুনার ভাঙনে ঐ এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে । এ ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে ঘর-বাড়ি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য স্থাপনা। এখন আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষদের।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, অসময়ে ভাঙনের ফলে যমুনা পূর্ব পাড়ের কয়েক একর ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যমুনার ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন ফসলি জমি। কৃষকের চোখের সামনে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে তাদের জমিজমা। নদীর পাড়ে বসে এমন দৃশ্য দেখে নীরবে চোখের পানি ফেলছে স্থানীয় কৃষকরা।

স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণ ও জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যক্রমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফসলি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গাইড বাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভাঙন কবলিত এলাকার কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যমুনার ভাঙনে আমাদের বসতভিটা ও ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর বর্ষার আগেই যমুনার ভাঙনে আমাদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । এ বছর আমরা সরকারিভাবে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।

সরেজমিনে উপজেলার জিগাতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জিগাতলা গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। সেখানে এবার স্থানীয়রা ভুট্টা, তিল, বাদাম, বোরো ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছিল কৃষকরা । এছাড়াও রামপুর, গোপিনাথপুর, বাসুদেবকোল এলাকাতেও একই চিত্র দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া গত বছরের মতো এবারও উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া ও মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বার বার আশ্বাস দিলেও বাঁধের কাজ শুরু হচ্ছে না।

এদিকে, প্রতি বছর বন্যায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে মাটি ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধপাকা সড়ক, গাইড বাঁধ, বসত-বাড়ি, মসজিদ-মন্দির, ছোট-বড় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

জিগাতলা গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এখান থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হতো। সে সময় কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পারত না, প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দিত। স্থানীয় সাবেক এমপি ছোট মনির ঘাটটি পরিচালনা করতেন। এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, যমুনা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভবত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে ফসলি জমির সঙ্গে তাদের ঘরবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ খান জানান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামীম মিয়া জানান, ‘ভূঞাপুরের ইউএনও, এসিল্যান্ডের সঙ্গে তিনি ভাঙন কবলিত জিগাতলা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদী ভাঙনের স্থান থেকে প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার কাছে ঘরবাড়ি রয়েছে। সুতরাং এলাকাটি মনিটরিং করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইআ

টাঙ্গাইল নদী ভাঙন যমুনা নদী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর