পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের সাতমেড়া ইউনিয়নের টিটিহিপাড়ায় তেতুঁলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিলেন এক নারী। মুখে ছিল না কোনো ভাষা, চোখে ছিল শূন্যতা, যেন হারিয়ে গেছেন নিজ ভুবনে। কয়েকদিন ধরেই এলাকাবাসী তাকে আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখছিলেন। কারো বাড়ির আঙিনায়, কখনো রাস্তার পাশে। পরিচয়হীন, অভিভাবকহীন, কিন্তু এক জীবন্ত মানুষ— যার শেষ যাত্রার সাক্ষী হলো শুধু মহাসড়ক আর কিছু পথচারী। আর পুলিশ যেন অভিভাবকের ভূমিকায়।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল, চলছিল প্রতিদিনের মতোই ব্যস্ততা। হঠাৎই এক গর্জন, তারপর নিস্তব্ধতা। একটি দ্রুতগতির ট্রাক ধাক্কা দেয় ওই নারীকে। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। মুহূর্তেই ভিড় জমে যায়। কেউ ছুটে আসে পানি নিয়ে, কেউ আবার ফোন করে থানায়।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন তেতুলিয়া হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেজবাউল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা। যথারীতি আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। মরদেহটি নেওয়া হয় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে। সিআইডির বিশেষ ইউনিট চেষ্টা চালায় আঙ্গুলের ছাপ থেকে পরিচয় শনাক্তে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
নিঃসঙ্গ এই নারীর পাশে দাঁড়ায় পুলিশ—নিজেরাই হয়ে ওঠেন তার শেষ প্রহরীর ভূমিকায়। ময়নাতদন্ত শেষে, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে গভীর রাতে তাকে দাফন করা হয় পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় কবরস্থানে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই সড়ক পরিবহণ আইনে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার এসআই মেজবাউল ইসলাম। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেব দায়িত্ব নেন এসআই আতিকুর রহমান। তিনি মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের দায়িত্বে তিনি মরদেহটি দাফনের ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরিচয় না মেলায় ভোরে তাকে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দাফন সম্পন্ন করা হয়।’
তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবাশিষ রায় বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম কেউ এসে দাবি করুক, কিন্তু কেউ আসেনি। তার পরিচয় মেলেনি। তাই আমরাই তার দায়িত্ব নিয়েছি, যেন অন্তত একজন মানুষ সম্মানের সঙ্গেই বিদায় নিতে পারেন।’