Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুবির ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক সংকট চরমে,ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

কুবি করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ১৯:০৬

ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফার্মেসি বিভাগে চরম শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। এই বিভাগের সাতটি আবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ২২৮ জন। কিন্তু বর্তমানে ২২৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক। বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত ৪৬:০১ অর্থাৎ ৪৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক পাঠদান করছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এই বিভাগে তা দ্বিগুণের বেশি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সেশনজট নিরসনে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টিচিং লোড নিতে হচ্ছে বিভাগটির শিক্ষকদের। একজন শিক্ষককে বাধ্য হয়ে একাধিক আবর্তনে একাধিক কোর্স নিচ্ছেন। ফলে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ল্যাব ওরিয়েন্টেড এই বিভাগে।
এছাড়াও, ২০১৩ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পার হলেও বিভাগটিতে কোনো অধ্যাপক নেই। ফলে গুনগত মানের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিভাগের তরুণ শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন সাতজন শিক্ষক। তন্মধ্যে বর্তমানে বিভাগে পাঠদান কার্যক্রমে নিয়োজিত পাঁচজন শিক্ষক। বিভাগটিতে সর্বশেষ শিক্ষা ছুটির বিপরীতে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর দুইজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে ২০২৪ সালের ৬ জুলাই বিভাগের প্রভাষক বিদুৎ কুমার সরকার চাকরি থেকে রিজাইন দিয়ে অন্যত্র যোগদান করেন। এরপর গত সাড়ে তিন বছরে চরম শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও ওই বিভাগে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বিভাগটির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিভাগের শিক্ষক সংকট নিরসনে সম্প্রতি উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। যদি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়োগের জন্য অনুমতি দেয়, তাহলেই বিভাগটির শিক্ষক সংকট নিরসন করা সম্ভব। নয়তো এভাবেই চলতে হবে।

বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর আনজুম সাজন বলেন, ‘ফার্মেসি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বিভাগ যেখানে পাঁচ বছরের অনার্স হওয়ায় মাস্টার্সসহ ৬টি ব্যাচ সবসময় রানিং থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে সেশনজটের কারণে সাতটি ব্যাচও চলমান থাকে। পাশাপাশি প্রতি সেমিস্টারে আমাদের অনেকগুলো ল্যাবকোর্স থাকে । সার্বিক বিবেচনায় আমাদের বিভাগে অনেক বেশি শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে আমাদের বিভাগটি চলছে। ফলে এখানকার পড়াশোনার পরিবেশ ও গতি খুবই দুঃখজনক পর্যায়ে আছে। যা আমাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তাসহ নানারকম মানসিক সমস্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রানিং ব্যাচ সাতটি কিন্তু শিক্ষক মাত্র পাঁচজন। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ক্লাস পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব। শিক্ষকরা ব্যস্ততার কারণে আমাদের সময় দিতে পারছেন না। যে স্বপ্ন নিয়ে এ বিভাগে ভর্তি হয়েছি তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’

একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সুমন বলেন, ‘ফার্মেসি বিভাগের বর্তমানে রানিং সাতটি ব্যাচ এবং আরও একটি ব্যাচ আসছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষক সংখ্যা মাত্র পাঁচজন। যার জন্য প্রতিদিনের ক্লাসগুলো সময়মতো করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমাদের মধ্যে সেশনজটের একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমাদের একটাই চাওয়া যেন শিগগিরই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ করে পাঠদান দ্রুত গতিতে চলতে পারে।’

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ দেবনাথ বলেন, ‘বিভাগের ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে সাতজন শিক্ষা ছুটিতে আছেন। শিক্ষার্থীরা এ সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিল। এ বিষয়ে আমরা একটি মিটিং করবো তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সম্প্রতি উপাচার্য স্যারের সঙ্গে বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। উপাচার্য স্যার আমাদের অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও সেখান থেকে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের কোনো পোস্ট আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি একাডেমিক ক্যালেন্ডার ঠিক রাখার জন্য। আমি এখানে ডিন হিসেবে আছি আমার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, ভিসি স্যারেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধতার জায়গা থেকে বেরিয়ে গিয়ে তো কিছু করতে পারবো না।’

এ বিষয়ে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘সাতটি ব্যাচে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে লেখাপড়া করানো কোনোভাবেই সম্ভব না। সারাদিন ক্লাস নিলে কোনোরকম শুধু ক্লাসটাই নিতে পারবে। খাতা দেখা, রেজাল্ট পাবলিশ করা, রিসার্চ করা অসম্ভব। এখন যে নতুন নিয়ম আসছে এতে ইউজিসি থেকে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি আসছে না এবং ওই ডিপার্টমেন্টের অনেকগুলো শিক্ষক বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। সরকার অনুমতি দিলেই আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিব। সরকার যে কয়টা পদের অনুমোদন দেয় সেই টাকাই দেয়। তাই সরকার অনুমোদন না দিলে আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিলে সরকার টাকা দিবে না।’

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ফার্মেসি বিভাগ শিক্ষক সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর