ঢাকা: জমি কেনা-বেচা ও আবাসন খাতে কর ফাঁকি হ্রাস এবং রাজস্ব আহরণ বাড়াতে আগামী বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমতে পারে। পাশাপাশি মৌজামূল্য থেকে সরে এসে বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জমি বা সম্পত্তির দলিল মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে আবাসন খাতে স্বচ্ছতা ও রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করছে সরকার।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় আইন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র মতে, বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরণের কর ও ফি রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।
জানা যায়, জমির আনুষ্ঠানিক রেকর্ডের সবচেয়ে ছোট ইউনিট হচ্ছে মৌজা। নিবন্ধিত মূল্যকে বিবেচনায় নিয়ে জমির মৌজা মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। প্রায় সকল দলিল মৌজা মূল্যে নিবন্ধিত হয়, যা সাধারণত প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম হয়। জমি ও ফ্ল্যাটের মৌজা মূল্য বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় বর্তমানে, বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতা বেশি দামে জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচা করলেও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য মৌজা মূল্য অনুযায়ী কম দাম দেখিয়ে দলিল করে। এতে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর তথ্যমতে, বাজারমূল্যের তুলনায় কম দাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় প্রতিবছর সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারায়।
জানা যায়, বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরও অপরিবর্তিত থাকবে। তবে স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করতে পারে এনবিআর। তবে স্থানীয় সরকারের আয়ে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য বিদ্যমান স্থানীয় সরকার করহার অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে স্থানীয় সরকার কর হয়েছে।
জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের সময় গেইন ট্যাক্স বা উৎসে কর সকল ক্ষেত্রে অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ঢাকার ক-ঘ শ্রেণীর ক্ষেত্রে উৎসে কর ৮ শতাংশ, এবং ঙ- শ্রেণীর ক্ষেত্রে এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকার ক-ঘ শ্রেণীর ক্ষেত্রে উৎসে কর ৪ শতাংশ, এবং ঙ- শ্রেণী এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করা হতে পারে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা বাদে অন্যান্য পৌরসভার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া, পৌরসভা ব্যতীত অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎসে কর বিদ্যমান ২ শতাংশ হতে কমিয়ে ১ শতাংশ আরোপ করা হতে পারে।
জানা যায়, বর্তমানে শহর এলাকায় কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা উৎসে কর নির্ধারণ করা আছে। আগামীতে বাজারমূল্য অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন হলে এ ধরণের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমার প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছে এনবিআর।
ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২ শতাংশ, এবং ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের চেয়ে বেশি হলে ৪.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। নতুন বাজেটে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ভ্যাটহার ১ শতাংশ, এবং ১৬০১-২৪০০ বর্গফুট পর্যন্ত ২ শতাংশ এবং ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের বেশি হলে ৩ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হতে পারে।
এছাড়া বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভূমি উন্নয়ন ফি বাবদ ২ শতাংশ ফি রয়েছে, যা আগামী বাজেটে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।