Wednesday 11 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে দেশকে গড়ার সুযোগ এসেছে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ২০:৫২ | আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ২০:৫৪

সেমিনারে বক্তব্য দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ

সিলেট: সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেছেন, আমাদেরকে মানুষের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে হবে। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে দেশকে গড়ার সুযোগ এসেছে। তিনি রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

বুধবার (২১ মে) দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউসে সিলেট আঞ্চলিক তথ্য অফিস আয়োজিত গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আবদুল কাদের তাপাদার। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন ‘চব্বিশের জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে গণহত্যার পর তা এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠে। রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। এ আন্দোলনে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ভার্চুয়াল গণমাধ্যম এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যতম সহযোগী ছিল দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার চরম জুলুম-নিপীড়ন চালালেও অধিকাংশ মিডিয়া নীরব ভূমিকা পালন করে। এমনকি সরকারের সহযোগী হয়ে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারেও সোচ্চার ছিল অনেক মিডিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের জুলাই-আগস্টে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ফ্যাসিবাদের পতন আন্দোলনে রূপ নেয়, তখনও দেশের হলুদ মিডিয়াগুলো স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ হয়ে নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করে।’

প্রবন্ধে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা দমনে গণহত্যাসহ সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল আওয়ামী সরকার। অনেক প্রিন্ট, অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেই ফ্যাসিবাদী সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে ছাত্র-জনতার স্বার্থবিরোধী সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। আর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) পুরোপুরি সরকারের মুখপত্রের ভূমিকা পালনের অংশ হিসেবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রচারণা চালায়। ছাত্র আন্দোলনকে সন্ত্রাসীদের সহিংসতা হিসেবে আখ্যায়িত করে তা দমনে ফ্যাসিবাদী সরকারকে কার্যত বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে অধিকাংশ গণমাধ্যম।’

প্রবন্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৫ সাংবাদিকের শহিদ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আন্দোলনের সময় অধিকাংশ গণমাধ্যম পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালি করলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৫ জন অকুতোভয় সাংবাদিক তাদের জীবন উৎসর্গ করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে পরিণতির দিকে নিয়ে গেছেন। এদের একেক জনের শাহাদতবরণ আন্দোলনকে এক ভিন্ন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছে। ফ্যাসিবাদের দালালি করা অধিকাংশ গণমাধ্যমের বিপরীতে রক্তাক্ত আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়ে রক্তের মাঝে তারা নিজেদের জীবন বিলীন করে দিয়ে প্রমাণ করেছেন, গণমাধ্যম দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, ফ্যাসিবাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে কখনো টিকে থাকতে পারে না।’

‘জুলাই আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো গুলিতে নিহত পাঁচ সাংবাদিক হলেন, ঢাকা টাইমসের হাসান মেহেদী, ভোরের আওয়াজ পত্রিকার শাকিল হোসাইন, দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব, ফ্রিল্যান্স ভিডিওয়ের তাহির জামান প্রিয়ো, দৈনিক খবরপত্রের প্রদীপ কুমার ভৌমিক। তারা সকলেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।’

প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যখন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যখন আত্মগোপন করেন, যখন দেশজুড়ে চলছিল সাধারণ মানুষের বিজয় উল্লাস; সেদিনও বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ছাত্র-জনতার বিপক্ষে।’

আরও উল্লেখ করা হয়, অবশ্য ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতায় জড়িতরা জনগণের চরম রোষানলে পড়েন, চলে যান আত্মগোপনে। বিভিন্ন মামলায় অনেকেই কারাগারে আছেন। সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলো থেকেও চিহ্নিত ফ্যাসিবাদের দোসররা বিতাড়িত হয়েছেন। অনেক সাংবাদিকের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণে তাদের হিসাব জব্দ করেছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত অনেক গণমাধ্যম নিজেদের রক্ষা করতে ৫ আগস্ট-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট ও সংবাদকর্মীর বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল করেছে।

সিলেট আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মুমিনুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, দৈনিক সিলেটের ডাক’র প্রধান বার্তা সম্পাদক এনামুল হক জুবের, বাসস’র সিলেট ব্যুরো প্রধান সেলিম আউয়াল, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ, দৈনিক প্রভাত বেলা’র সম্পাদক কবির আহমদ সোহেল, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম. সাইফুর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ বেতার’র সিলেট জেলা সংবাদদাতা এম.এ রহিম, দৈনিক আমার দেশ’র ব্যুরো প্রধান খালেদ আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক ফয়সল আলম, নিউ এইজ’র সিলেট প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির, দৈনিক সিলেটের ডাক’র নুর আহমদ, দেশ টিভি’র সিলেট প্রতিনিধি খালেদ আহমদ।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আঞ্চলিক তথ্য অফিসের তথ্য কর্মকর্তা আকিকুর রেজা চৌধুরী। শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সাংবাদিক খলিলুর রহমান।

সারাবাংলা/এইচআই

গণঅভ্যুত্থান জেলা প্রশাসক সিলেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর