Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিএসসিসি মেয়র
দায়িত্ব নিলেও ইশরাকের মেয়াদ আর কতদিন!

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ২২:৩০

বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণের নগরপিতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। কিন্তু শপথ আটকে থাকায় বসতে পারছেন না চেয়ারে। আর শপথ পড়া না পড়া এখন নির্ভর করছে হাইকোর্টের ওপর। যদিও এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে বৃহস্পতিবার। তবু রাজপথ ছাড়তে নারাজ ইশরাক সমর্থকরা। ইস্যুটি ঘিরে ক’দিন ধরেই টানা কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা। নগরভবনেও ঝুলছে তালা। থমকে পড়েছে নাগরিক সেবা। তবে গদি পেলেও ইশরাকের মেয়াদ কতদিন হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে জনমনে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতা ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের আদেশ হওয়ার কথা ছিল বুধবার। তবে এদিন দুই পক্ষেরই শ্বাসরুদ্ধকর শুনানি হয়। আইনি যুক্তিতে কেউই কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। গুরুত্ব বিবেচনায় এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানিসহ আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার ধার্য করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিন শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রুলসহ স্থিতাবস্থা দেব। এজন্য আমরা সবাইকে শুনতে চাই।’ আদালতে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আবেদনকারীর আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই।’ আদালত বলেন, ‘আমরা তো স্বপ্রণোদিত হয়েও দিতে পারি।’ কায়সার কামাল বলেন, ‘আমাদের কিছুটা বাধা হবে।’ আদালত বলেন, ‘হবে না।’ কায়সার কামাল বলেন, ‘তারা তাপসের পক্ষে মামলা করেছে। এখানে মামলাকারীর কোনো অধিকার নেই। তিনি সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’

রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেওয়া উচিত। আমরা নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের ভুল দেখিয়েছি। আবেদনকারীর আইনগত অধিকারও দেখিয়েছি।’ ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘যখন তাপস বসেছে তখন তো আসা উচিত ছিল। গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহর ব্লকড। ইশরাকের পক্ষে হাজারও জনগণ আন্দোলন করছেন। আর আবেদনকারীর পক্ষে ১০ জন লোকও নেই। এখানেই ছদ্মবেশে তাপসের হয়ে রিট করা হয়েছে।’

নগরবাসী জানান, ইশরাক ইস্যুতে টানা আন্দোলনের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সিটি করপোরেশনে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে আসছেন সুবিধাভোগীরা। এছাড়া, আওয়ামী লীগের সব নির্বাচনকেই অবৈধ ঘোষণা করেছে বিএনপি। অথচ সেই নির্বাচনের ফলাফলেই তারা মেয়রের চেয়ারে বসতে চাইছে। তাও আবার নগরবাসীকে বেকায়দায় ফেলে। তাদের আন্দোলনের কারণে শুধু ঢাকা দক্ষিণের মানুষই নন, গোটা রাজধানীবাসী কয়েকদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাই এসবের নিরসন চান সাধারণ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর শপথ নিয়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। তবে নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফল বাতিল চেয়ে একই বছরের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সব সিটি মেয়রকে অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া। এর মধ্যেই গত ২৭ মার্চ তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। একইসঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

গেজেট প্রকাশের দিনই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে লিগ্যাল নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ ও ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। এক পর্যায়ে ১৪ মে তাকে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে মামুনুর রশিদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী কাজী আকবর আলী।

আইন অনুযায়ী, ডিএসসিসির মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৫ মে। তবে ২০২০ সালের প্রথম সভা অনুযায়ী পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। কারণ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এ মেয়াদের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ‎আবার মেয়াদ শেষের আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) নতুন নির্বাচনও হওয়ার কথা। তাই ইসির গেজেটের পর মেয়র পদে শপথ নিলে ইশরাকের মেয়াদ কতদিন হবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে এরই মধ্যে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কেননা ৫ আগস্ট পরবর্তী সব সিটি মেয়রকে অপসারণ করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গেজেট আগে প্রত্যাহার বা বাতিল করতে হবে। কিন্তু ওই গেজেট চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে কোনো প্রতিকার চাননি ইশরাক হোসেন। অন্য কোনো আদালতও তা বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করেননি। ২০২০ সালে শেখ ফজলে নূর তাপসের নামে প্রকাশিত সেই গেজেটটি শুধুমাত্র সংশোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ তাপসের স্থলে ইশরাককে আর নৌকার স্থলে ধানের শীষ বসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মেয়রের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। প্রথম সভা অনুযায়ী জুন মাস পর্যন্ত থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন প্রশাসক। তাই রিট খারিজ হলেও ইশরাককে শপথ পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এমনকি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও কিছু করার নেই। অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো চেয়ারের নতুন করে সময় বাড়ানোর আইনগত সুযোগ নেই।’

‎সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান আইনে বিচার বিভাগ থেকে রায়ের পর মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ বা মেয়াদের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাই দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাকের বিষয়ে সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু নতুন, আর এটা আদালতের মাধ্যমে এসেছে। তাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ বা মেয়াদের বিষয়ে স্পষ্ট হতে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যায়। কারণ, আমাদের বর্তমান আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা নাই।’

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ডিএসসিসি মেয়র দায়িত্ব বিএনপি নেতা মেয়াদ শপথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর