Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিকড় কাটা গাছের কান্না, উন্নয়নের ছলে ঝুঁকিতে মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২৫ ২৩:৫৯

গাছের প্রাণ শিকড় কেটে চলছে সড়ক নির্মাণ।

পঞ্চগড়: উন্নয়নের নামে যখন গাছের শিকড় কেটে ফেলা হয়, তখন প্রকৃতি কাঁদে। কিন্তু সেই কান্না কেউ শুনে না। দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট বাজার থেকে শালবাহান পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ মিটার সড়ক এখন যেন উন্নয়নের নামে এক নীরব নির্মমতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘গাছ কাটিনি’ এই আশ্বাসে যখন মানুষ আশ্বস্ত, তখন বাস্তবে গাছের প্রাণ শিকড় কেটে নির্মাণ চলছে তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট বাজার থেকে শালবাহান পর্যন্ত সড়ক। সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছগুলো কাটা হয়নি, কিন্তু শিকড় কেটে ফেলায় প্রকৃতির শ্বাসরুদ্ধ এক ছবি এখন প্রতিদিন চোখে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

চলমান এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ টাকা, আর চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৩ টাকা। বাস্তবায়নে নিয়োজিত ‘মাহমুদা বেগম’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গাছ না কেটে সড়ক নির্মাণ করছে। শুনতে ভালো লাগলেও বাস্তবতা ভয়াবহ। গাছ না কেটে, কেটে ফেলা হয়েছে তাদের প্রাণ, অর্থাৎ শিকড়।

এই প্রশ্ন ও অভিযোগ এখন এলাকাবাসীর প্রতিটি মুখে। গাছ কাটা হয়নি, এটা যেন লোক দেখানো মানবতা। অথচ শিকড় কেটে গাছ দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মতোই। ঝড়-বৃষ্টিতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এসব গাছ, আর তার নিচে চাপা পড়তে পারে মানুষ, দোকান ও স্বপ্ন—এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিরনইহাট বাজার সংলগ্ন সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে বর্ধিত করা হচ্ছে। এ অংশে কয়েকটি গাছ দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের শিকড় কাটা হয়েছে। শিকড় কাটা গাছ রেখে চলছে নির্মাণ কাজ। ফলে গাছ ও মানুষ দুজনই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার জানানো সত্ত্বেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে—প্রকৃতি যখন নিঃশব্দে ধ্বংস হচ্ছে, প্রশাসন তখন চুপ কেন?

কেটে ফেলা হয়েছে গাছের শিকড়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ও সচেতন মহলের ভাষ্য—এই ঘটনা উন্নয়নের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে। যেখানে পরিকল্পনার অভাব, সমন্বয়ের ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতা একত্রে প্রকৃতিকে হত্যা করছে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল হক বলেন, ‘উন্নয়ন চাই, কিন্তু গাছ মেরে নয়। গাছের শিকড় কেটে রাস্তা বানানো মানে মানুষের জীবনকেও বিপদে ফেলা। গাছ কর্তন করে সড়ক নির্মাণ হোক, কিন্তু এভাবে শিকড় কেটে গাছ রেখে দেওয়া মানে মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার বিষয়টি ঠিকাদার, এলজিইডি ও প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছি, কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।’

দোকানদার রাজিউর রহমান তরুণ বলেন, ‘আমার দোকানের ঠিক পাশে একটি গাছ। সেই গাছের শিকড় কেটে ঠিকাদার রাস্তা নির্মাণ করছে। আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি, গাছ কাটার প্রয়োজন হলে কাটুক। কিন্তু শিকড় কেটে গাছ রেখে যাওয়ায় এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

পথচারী মোস্তফা কামাল শিমুল বলেন, ‘এই রাস্তা বানানো হচ্ছে মানুষের জন্য, কিন্তু এখন মানুষই সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। গাছ রেখেই রাস্তা করা হচ্ছে, অথচ জীবন্ত গাছের শিকড় কেটে দিয়ে তারা উন্নয়নের গান গাইছে। গাছেরও জীবন আছে। যদি গাছ কাটার প্রয়োজন হয়, তাহলে কর্তন করুক। কিন্তু এমন ঝুঁকি কেন ‘

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান বলেন, ‘গাছ কাটার মালিক ইউএনও ও বনবিভাগ। গাছ তো আমাদের না। আমাদের দায়িত্ব রাস্তা নির্মাণ করা। গাছ কাটার অনুমতি না পেলে আমরা গাছ কাটতে পারি না। শিকড় কাটা হয়েছে ঠিকাদারের লোকজন আমাদের না জানিয়ে করেছে। খবর পেয়ে আমি গিয়ে নিষেধ করেছি। গাছের মালিক যারা, তারা ব্যবস্থা নেবে।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘আমি গাছ কাটার অনুমতি দিইনি। খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘

সারাবাংলা/এইচআই

উন্নয়ন গাছের শিকড় ঝুঁকিতে মানুষ পঞ্চগড় শিকড় কাটা