চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউজের মাঠকে মুক্তাঙ্গন ঘোষণার জন্য বিশিষ্টজনদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এতে যোগ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মাঠটি সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়ে মেয়র সেখানে একটি ‘সবুজ পার্ক’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে নগরীর কাজির দেউড়িতে সার্কিট হাউজ মাঠের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষাবিদ, লেখক, নগর পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী ও পরিবেশকর্মীরা। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এ কর্মসূচিতে একপর্যায়ে উপস্থিত হন সিটি মেয়রও।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের মাঠ থেকে শিশুপার্ক উচ্ছেদ করে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে আর কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করে সেটিকে মুক্তাঙ্গন হিসেবে রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবারের (২২ মে) মানববন্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বারবার বলছি যে আমরা একটি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী চাই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যে মাস্টারপ্ল্যান আছে, সেখানেও এটা একটা সবুজ মাঠ আছে। সম্পূর্ণভাবে সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
সার্কিট হাউস মাঠে হাসপাতালের মতো স্থাপনা না করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এর আগে সিআরবিতেও হাসপাতাল করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু এখানে যারা আছেন, সবাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সিআরবিতে রেলওয়ের যে হাসপাতাল আছে, সেটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করা হোক। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সে উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী চিকিৎসা নিতে পারবেন। এখান থেকে (সার্কিট হাউস) রেলওয়ে হাসপাতাল মাত্র এক মিনিটের রাস্তা।’
তিনি বলেন, ‘এখন শুনছি, এখানে হাসপাতাল হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি, আমার কালুরঘাটে ৯ একর জায়গা আছে। ওই ৯ একর জায়গা নিয়ে ওখানে হাসপাতাল করুন, আমাকে এই জায়গা দিয়ে দেন, সবুজ পার্ক করব এখানে। আমি আপনাদের প্রস্তাব দিচ্ছি। এর থেকে ভালো প্রস্তাব হতে পারে না। আপনারা হাসপাতাল করলে সেখানে অবহেলিত মানুষ সেবা পাবেন। এখানে অনেক হাসপাতাল, কাছেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, আশপাশে এত প্রাইভেট হাসপাতাল, এখানে আর হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল করতে হলে কালুরঘাট এলাকায় একটা বড় হাসপাতাল করেন। সেখানে আমার জায়গা আমি ছেড়ে দিব। বিনিময়ে এটা আমাদের দেন।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্বের একটি ব্যতিক্রম নগর। এই নগরকে রক্ষা করতে না পারলে উত্তর প্রজন্ম তাদের দায়ী করবে। একে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী কিন্তু এখানে একটিও উদ্যান নেই, মাঠ নেই। শহরে একসময় পাঁচ থেকে ছয়টা মাঠ ছিল। অথচ এখন শিশু-কিশোররা খেলার মাঠ পায় না। এই মাঠটি সবাই মিলে রক্ষা করব। এর পেছনে যে পুরোনো সার্কিট হাউস, সেটি একটি ব্রিটিশ স্থাপনা। এখানে এ রকম আর একটিও স্থাপনা নেই। সেটি এখন জাদুঘর আর সামনের মাঠটি এর ল্যান্ডস্কেপ হিসেবে আছে। এখানে কোনো স্থাপনা হতেই পারে না।’
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান বলেন, ‘এই মাঠটি এতদিন যেমন উন্মুক্ত ছিল তেমন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।’
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘একটাই কথা। এই উদ্যানকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখানে কোনো স্থাপনা হবে না। উদ্যান কোনো বিলাসিতা নয়। নগরজীবনে নগরবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বস্তিতে থাকার জন্য এবং তাঁদের জীবন আনন্দময় হওয়ার জন্য নগরে উদ্যান থাকতে হবে।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ শফিক হায়দার, বিজয় মজুমদার ও অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সামনের মাঠটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। ১৯৯২ সালে মাঠটি ইজারা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শিশুপার্ক স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে শিশুপার্কটি উচ্ছেদ করা হয়। এরপর মাঠটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।