ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংগঠনটির পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে এই অধ্যাদেশ বাতিলের যৌক্তিকতা, এনবিআরে কি ধরনের সংস্কার হওয়া উচিত ও এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয়।
আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে স্মারকলিপি পৌঁছে দেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস) হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, উপ কর কমিশন শিহাবুল ইসলাম কুশল, কর পরিদর্শক মুতাসিম বিল্লাহ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল বসর।
স্মারক লিপিতে বলা হয়, ‘দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব আহরণের প্রাণভোমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির অধ্যাদেশটি অত্যন্ত গোপনে, অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে জারি করা হয়েছে। উক্ত অধ্যাদেশে জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুন্ন করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা প্রভাবশালী মহলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য ও পেশাগত স্বকীয়তাকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল কাঠামো বিনষ্ট করে রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমটি বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ১৩ জন প্রতিনিধি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেয়। আমাদেরকে উক্ত আলোচনা সভায় নিজেদের মতামত ও উদ্বেগ প্রকাশ এবং তার সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে বলে সভার আগে আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। অনাকাঙ্খিত স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া এবং সেই মতামত মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা আমলে না নেওয়ায় দুঃখজনক হলেও জানাতে হচ্ছে যে, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।’
এতে বলা আরও হয়, ‘এই নতুন বাংলাদেশ তরুণদের আকাঙ্ক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বরাবরই তরুণদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা অনুরোধ করছি, তারই প্রতিফলন হিসেবে রাজস্ব সংস্কার নিয়ে এনবিআরের এই তরুণ অফিসারদের আকাঙ্ক্ষার কথা, বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজস্ব কাঠামো নিয়ে আমাদের স্বপ্নের কথা শুনেন।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে আমরা আশা করি, আপনি দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম, বাস্তব জ্ঞাননির্ভর, দক্ষ ও কার্যকর একটি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সদ্য জারিকৃত অধ্যাদেশটি বাতিলসহ আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিবেন।’
আরও বলা হয়, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, আপনি এনবিআরের ইতিবাচক ও টেকসই সংস্কারের লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নিশ্চিত করবেন এবং এই প্রক্রিয়ায় কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তাদের হৃত পেশাগত সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।’
স্মারক লিপিতে সবশেষ বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- আপনার নেতৃত্বে দেশ একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উপযুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবে।’