নেত্রকোনা: নেত্রকোনার পশুর হাটগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বসেছে গরুর হাট, তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুরের দেওয়ান বাজারের বিশাল হাট। এই হাটে মেলে খাঁটি দেশি গরু। এবারের কোরবানিতে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু সরবরাহ থাকায় ক্রেতারা বেশ স্বস্তিতে পছন্দের গরু কিনতে পারছেন, আর দামও রয়েছে তাদের নাগালের মধ্যেই।
জাহাঙ্গীরপুরের দেওয়ান বাজার অন্যতম বৃহৎ গরুর হাট হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন এখানে কোটি কোটি টাকার গরু কেনাবেচা হয়। দূর-দূরান্তের ব্যাপারীরাও এই বাজার থেকে গরু কিনে নিয়ে যান লাভবান হওয়ার আশায়।
হাওরবেষ্টিত এই দেওয়ান বাজারে এখন চোখে পড়ছে কেবল দেশি গরুর সমারোহ। কোরবানির সময় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাংসের জন্য দেশি গরুর কদর থাকে সবসময়ই। তাই শুধু জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, অন্যান্য জেলার ক্রেতারাও ছুটে আসেন এখানকার হাওরের গরু কিনতে। তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের গরু পাওয়া যাওয়ায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই হাট।
স্থানীয়রা জানান, দেওয়ান বাজারের সুনাম কেবল জেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই হাট দেশি ও নির্ভেজাল গরু-ছাগলের জন্য সুনাম রয়েছে। কোরবানির ঈদে বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ভিড় করেন এবং শত শত গরু কিনে নিয়ে যান নিজেদের জেলায় বিক্রি করার জন্য।
গোবিন্দশ্রীর ক্রেতা জহিরুল ইসলাম জানালেন, এই হাটে অসংখ্য দেশি গরুর সমাগম ঘটে, ফলে পছন্দসই গরু বেছে নেওয়া যায় সহজেই। দামও থাকে ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে, পাশাপাশি বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ ভালো। এ বছর গরুর দাম সত্যিই হাতের নাগালে, যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তিনি তার পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচটি দেশি গরু কিনেছেন এবং গরুর আকার, রঙ ও ন্যায্য মূল্যে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
মাদানী থেকে আগত ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, দেওয়ান বাজার বিভিন্ন প্রকার দেশি গরুর এক বিশাল হাট। হাওর অঞ্চলের গরু প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠায় এর মাংস যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এ কারণেই সারা বছর এই বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে এখানে গরুর সরবরাহ আরও অনেক বেড়ে যায়।
এলাকার গরুর ব্যাপারী জয়েন উদ্দিন জানান, দেশীয় গরুর দুটি বড় বাজারের মধ্যে মদনের দেওয়ান বাজার অন্যতম। বরাবরের মতো এবারও তিনি কোরবানির জন্য ২০টি দেশি গরু কিনেছেন এবং আশা করছেন এগুলো জেলার বাইরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে লাভবান হবেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি এই বাজার থেকে গরু কিনে আসছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল্লাহ জানান, হাওর অঞ্চলে এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় গরুর বাজারগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার গরু মূলত প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠে। আসন্ন কোরবানিতে জেলায় মোট ১ লাখ ৬ হাজার ১০০টি গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে, যার বিপরীতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭টি পশু ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রয়েছে।