ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প , যা বিশ্ববাণিজ্যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (২৩ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ঘোষণায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপর আগামী ১ জুন থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারিদেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া প্রতিটি আইফোনে ২৫ শতাংশ কর বসানো হতে পারে।
এই ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, ডলারের মান হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাশাপাশি, ট্রেজারি বন্ডের রিটার্ন কমে আসে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা প্রত্যাশিত গতিতে এগোচ্ছে না, এমন ধারণা থেকেই ট্রাম্প এই হুমকি দিয়েছেন।
অ্যাপলের বিরুদ্ধে এই শুল্ক হুমকি ট্রাম্পের সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন সরিয়ে আনার চাপ দেওয়া হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোনের উৎপাদন হয় না, তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্কের কারণে আইফোনের দাম কয়েকশো ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প আরও বলেন, অ্যাপলের পাশাপাশি স্যামসাং এবং অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতার ওপরও এই শুল্ক কার্যকর হবে এবং তা জুন মাসের শেষ নাগাদ বাস্তবায়ন হতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ বলেন, ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। তিনি জানান, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার ফোনালাপ হয়েছে এবং ইইউ চায় একটি যৌক্তিক চুক্তি হোক।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ বলেন, ‘আমরা আগেও দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় শুল্ক ওঠানামা করে। এটি সম্ভবত আলোচনার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।’
ইইউর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইইউর মোট রফতানি ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউরো, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি করেছে জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং ইতালি। প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্যে ছিল ওষুধ, গাড়ি, যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য এবং বিমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে, জার্মান গাড়ি থেকে শুরু করে ইতালীয় অলিভ অয়েল পর্যন্ত সব কিছুর দাম বাড়তে পারে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আবারও বাণিজ্য যুদ্ধের পথে ফিরে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।