রাশিয়া ও ইউক্রেন শুক্রবার (২৩ মে) একযোগে ৩৯০ জন করে মোট ৭৮০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যা ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উভয় দেশ আরও বন্দি মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
দুই পক্ষই জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ২৭০ জন করে সেনা সদস্য এবং ১২০ জন করে বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শনিবার ও রবিবার আরও বন্দি বিনিময় হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনীয় বন্দিরা উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ অঞ্চলের এক হাসপাতালে পৌঁছালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাস থেকে নেমে অনেকেই বিবর্ণ চেহারায় ইউক্রেনীয় পতাকায় মোড়ানো অবস্থায় ছিলেন।
২২ মাস ধরে বন্দি থাকা ইউক্রেনীয় সেনা আলেক্সান্ডার নেহির বলেন, ‘আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি বিশ্বাস না করলে বাঁচতে পারতাম না। প্রতিদিন বিশ্বাস রাখতে হয়।’
অন্যদিকে, মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ বন্দিদের প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তারা মনস্তাত্ত্বিক ও চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় অভিযানের সময় আটক কিছু বেসামরিক নাগরিকও ছিল মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায়।
বন্দি বিনিময়ের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, ‘এই আলোচনার জন্য দুই পক্ষকেই অভিনন্দন।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই যুদ্ধে লক্ষাধিক সেনা নিহত বা আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সঠিক সংখ্যা কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন শুক্রবার (২৩ মে) আবারও জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।
তবে রাশিয়া, যারা ২০২২ সালে প্রতিবেশী ইউক্রেন আক্রমণ করে এবং বর্তমানে দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখলে রেখেছে, বলছে তারা কিছু শর্ত পূরণের আগে আক্রমণ বন্ধ করবে না। ইউক্রেনের এক প্রতিনিধির মতে, রাশিয়ার প্রস্তাবিত শর্তগুলো অগ্রহণযোগ্য।
ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়া যদি শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় তবে তিনি নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করবেন। কিন্তু সোমবার (১৯ মে) পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর আপাতত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চেরনিহিভের হাসপাতালের বাইরে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বিনিময় ছিল প্রথম ধাপ। আমরা এখনও যুদ্ধবিরতির আশা করছি। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এই প্রচেষ্টায় সমর্থন দেবে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, বন্দি বিনিময় শেষ হওয়ার পর মস্কো কিয়েভকে একটি খসড়া শান্তি চুক্তি উপস্থাপন করবে।