মিয়ানমারের উপকূলে গত ৯ ও ১০ মে দুইটি পৃথক নৌকাডুবিতে ৪২৭ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি চলতি বছরে সমুদ্রপথে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হতে পারে। শনিবার (২৪ মে) আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, ৯ মে একটি নৌকায় থাকা ২৬৭ জনের মধ্যে মাত্র ৬৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। আরেকটি নৌকা ১০ মে ডুবে যায়, যাতে ছিলেন ২৪৭ জন রোহিঙ্গা। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ২১ জনকে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ।
নৌকাদুটি বাংলাদেশে কক্সবাজারের বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প অথবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ছেড়ে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবছর সাগরপথে পালাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।
ইউএনএইচসিআর-এর হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্দি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে এই ঘটনাকে রোহিঙ্গাদের চরম অসহায় অবস্থার দুঃখজনক স্মারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেভাবে ক্রমশ কমে আসা মানবিক সহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সেটিও এই বিপদের অন্যতম কারণ।’
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে আছেন, অন্যদিকে রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা চরম দুর্দশার মধ্যে শরণার্থী শিবিরে বাস করছেন।
২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে রাখাইনে সেনাবাহিনী ও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের জীবন আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যুরো প্রধান হাই কিয়ং জুন বলেন, ‘মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ জীবন ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা বেছে নিচ্ছেন।’
২০২৪ সালেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় অন্তত ৬৫৭ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
মানবিক সহায়তা তহবিলে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সাহায্য কমানো অন্যতম কারণ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
২০২৫ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআর মোট ৩৮৩ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবিলম্বে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।