Saturday 24 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃতির প্রাণ পুরুষ


২৪ মে ২০২৫ ১৫:৩৬ | আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ১৮:০২

বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে আয়োজিত ৪৯তম ফারাক্কা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা।

ঢাকা: আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বা মাওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃতির প্রাণ পুরুষ। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রকৃতি, মানুষের জীবন নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পানির জন্য লং মার্চের ডাক দিয়েছিলেন। সেই মাওলানা ভাসানীর আদর্শ ধারন করে তরুন প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে ভাসানী পরিষদ আয়োজিত ৪৯তম ফারাক্কা দিবস উপলক্ষ্যে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মাওলানা ভাসানীর জীবনের নানা কর্মকাণ্ড আদর্শ এবং ফারাক্কা বাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিভাবে দেশের পথে প্রান্তরে কাজ করেছেন সেসব তুলে ধরেন আলোচকরা।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ শেখ রোকন বলেন, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও প্রকৃতি রক্ষার বিষয় সামনে এলে তখন মাওলানা ভাসানি সামনে আসেন। তিনি বলেন, ফারাক্কা লং মার্চ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল করেন নি। বিশ্বের কোথাও নদীতে বাধের প্রতিবাদে লংমার্চ হয়েছে কীনা জানিনা। কিন্তু বাংলাদেশে সত্তরের দশকে করেছিলেন মওলানা ভাসানি। তিনি বুঝিয়েছিলেন নদী পানি জনজীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ন। আমরা যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করি আমাদের কাছে মওলানা ভাসানী প্রাণ পুরুষ।

তিনি আরও বলেন, প্রান প্রকৃতির আন্দোলন এখানকার মতো করে হতে হবে। এক্ষেত্রে মাওলানা ভাসানী আমাদের পথ দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নদীগুলো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। নদী ও প্রকৃতি আন্দোলনে কেউ রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা উচিত হবেনা। আলোচনায় এনসিপি নেতা সাইদ উজ্জল গণঅভ্যুত্থান গণ ক্ষমতার অংশ। গণঅভ্যুত্থান করেছি কিন্তু জনগনের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। ভাসানির চিন্তা আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। আমরা ভাসানির আদর্শ নিয়ে জনগনের অধিকার নিয়ে লড়াই করে যাবো। এনসিপিতে নানা ঘরানার লোক আছে কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবোনা।

বিজ্ঞাপন

আরক বক্তা বলেন, রাজনীতি কারো পেশা না এটি সমাজের জন্য কাজ করা, কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নিয়ে নেয় যে কারনে দেশে দুর্নীতি বাড়ছে।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ১৭ বছর জাতির কাঁধে বসে থাকা ফ্যাসিবাদি বসে থেকেছে। একটা বড় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদি পালিয়েছে কিন্তু কেন যেন মনে হয় আবার যেন ফ্যাসিবাদি পেয়ে বসেছে। গত কয়েকদিনের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব।

তিনি আরও বলেন, আপনারা কি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন না? এ সময় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সংবিধান ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন। এটি (সংবিধান) একজনকে খুশি করতে এটা করা হয়েছেন। শেখ মুজিব ফ্যাসিবাদের চূড়ান্তে পৌছে গেছিলেন।

গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, গত ১৫ বছর শুনেছি শেখ হাসিনা ছাড়া বিকল্প কেউ নেই। আমরা যারা রাজনীতি করি আমরাও ভেবেছিলাম মনে হয় হাসিনা ছাড়া কিছু নেই। কিন্তু আপনারা দেখছেন সবকিছুর বিকল্প আছে। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া নির্বাচন যদি দেয়া হয় তাহলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হবেই। এমন ভাবে সংবিধান প্রনয়ন করতে হবে যেন ভবিষ্যতে কোনোদিন ফ্যাসিবাদের জন্ম না হতে পারে। মওলানা ভাসানির উদাহরন দিয়ে তিনি বলেন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছিলেন তার সকল সম্পত্তি মানুষকে দান করে গেছেন, এখনকার রাজনীতিকরা সম্পদ অর্জনের জন্য ব্যস্ত, মরিয়া।

বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হক নান্নু বলেন, মাওলানা ভাসানী যখন লংমার্চ শুরু করেন, তখন আমি ল পড়ি। তখন সাংবাদিকতা করতাম কিন্তু সরাসরি বেতনভুক্ত সাংবাদিকতা কখনো করিনি। আমরা সেই লংমার্চে যোগ দিয়েছিলাম।
তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার বলেন, মাওলানা ভাসানী আন্তজার্তিক মানের নেতা ছিলেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় বিশ্ব কবি। আমাদের ভারতে ফারাক্কার কাছাকাছি বোয়ালপাড়ার লোকজন বলেন, এখনো তারা ঘোরার শব্দ পান। লড়াই থামেনি আন্দোলন জারি রাখো। এসব গল্প কাহিনী ওইসব এলাকায় চলমান। আমাদের কলকাতা ছিলো কালচারাল হাব। অনেক মানুষের পদচারনা সেখানে থাকলেও মাওলানা ভাসানী সে অর্থে আলোচনায় আসেনি। ভারতেরও অনেক লোক ভাসানির ডাকে লং মার্চে যোগ দিয়েছিলো। এক ঘন্টার নোটিশে এখনো হয়তো মাওয়ালা ভাসানীর হয়ে জমায়েত হবে। যদিও ওপারে মাওলানা ভাসানির কোনো চর্চা হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, গত কয়েক মাসে রাজনীতিকে তরুণদের মধ্যে ক্যারিয়ার আকারে সৃষ্টি করা হয়েছে। মাওলানা ভাসানী শিরা উপশীরার মধ্যে নদী পানিকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলে লংমার্চের ডাক দিয়েছিলেন। ফারাক্কা লং মার্চ একটি লড়াই ছিলো। বর্তমানে আমরা যারা চব্বিশ শেষে ফ্যাসিবাদি সিস্টেম দূর করে একটি রাজনীতি একটি রাস্ট তৈরি করতে চাই তাদের জন্য মওলানা ভাসানি অনুসরনীয়। সেক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি। বর্তমানে ভাসানীকে মুজিবের বিরুদ্ধে তাকে দাড় করানোর চেষ্টা চলছে, এটা যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রোগ্রামগুলো করছে সেটার মধ্যে অনেক কিছু মিস হচ্ছে। ফারাক্কা তো শুধু আমাদের ক্ষতির কারন তা না। দেশের গণঅভ্যত্থান ভারতের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বড় বিজয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, বাহাত্তরে আমরা ইসলামকে বাদ দিয়েছি আর সেটা ছিলো সবচেয়ে বড় ভুল। ইতিহাসটা আমাদের বুঝতে হবে। ভাসানীর দর্শন আজও উপেক্ষিত। যা বলা হতো তিনি ভায়োলেন্স করতেন, আন্দোলন করতেন, লোক জড়ো করতেন ইত্যাদি।

তিনি বলেন, ভাসানী ও তাদের মতো যারা ছিলেন ওইসময়ে, তারা সব হারিয়ে গেলেন জাতিয়তাবাদের জোয়ারে। ইদানিং আমাদের মনের মধ্যে ঢুকে গেছে ধর্মান্ধ হয়ে যাবো। আমরা ধর্ম চর্চা করিনা। ধর্ম জানতে, উপলব্ধি করতে হবে সেটা যে কোনো ধর্মই হোক না কেন। নতুন রাজনীতিক এনসিপি নেতাদের উদ্দেশ্যে ভাসানী চর্চ্চার আহ্বান জানান। পানি আমরা সকলে পাবো, কিন্তু কখন কোন মৌসুমে দরকার সেটা আপনি কি করে হিসাব করবেন। যে জীবকে চোখে দেখেন না তার পানি কিভাবে হিসাব করবেন।

প্রাণ পুরুষ বাংলাদেশ মওলানা ভাসানী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর