ঢাকা: পরিপূর্ণ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মবরিতিসহ পূর্বঘোষিত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর এনবিআর ভবনে ‘এনবিআর ঐক্য সংস্কার পরিষদ’র এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে এ দিন কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপ কর কমিশনার মো. মোস্তফিজুর রহমান, সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে তারা বলেন, রোববার (২৫ মে) কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশন ছাড়া আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আর সোমবার (২৬ মে) আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতিত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
এ ছাড়া এনবিআর ভবনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছ সংগঠনটি।
এর আগে শনিবার এনবিআরের অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হয়। স্থবির হয়ে পড়ে কাস্টমস, ভ্যাট ও কর শাখার বিভিন্ন অফিস। এর আগে এই সংগঠনের ব্যানারেই পাঁচ দিনের কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ঢাকায় এনবিআর ভবনে দুপুরের পর থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। বিকেল ৪ টায় প্রেস ব্রিফিং চলার সময় এনবিআর ভবনের ভেতরে বাইরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের অতিরক্তি সদস্য এনবিআর ভবনে দুপুর থেকে অবস্থান নেন।
বিকেল ৪ টায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এর প্রেস বিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়,‘যেহেতু আমাদের উপর্যুক্ত চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি পূরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ হতে অদ্যাবধি সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়নি, সেহেতু আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এনবিআর ভবনের সামনে বিজিবি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— রোববার (২৫ মে) কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনগুলো ব্যতিত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রফতানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে ঢাকাস্থ সকল ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট দফতরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে এনবিআর প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতিত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
এ ছাড়া রোববার বিকেল ৪টায় এনবিআর প্রাঙ্গনে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনারা দেখেছেন আজকে সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। এ বিষয়টি আমাদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।’
আরও পড়ুন-
- অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৪ দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
- লাগাতার অসহযোগ, অবস্থান ও কর্মবিরতিতে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
- আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন কর্মকর্তারা
এতে আরও বলা হয়, ‘দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে আমাদের মূল চারটি দাবি পূরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। দাবি পূরণের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিবো।’

এনবিআর’র সামনে পুলিশের অবস্থান।
লিখিত বক্তব্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলছে, ‘আমাদের কর্মসূচির ফলে সম্মানিত করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে তাদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, আমরা এটাও জানিয়ে রাখতে চাই, আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করব।’
এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবিগুলো হলো— জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।