Sunday 25 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্রোহ ও ভালোবাসার কবি কাজী নজরুল

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ মে ২০২৫ ০৯:২৭ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১১:৪২

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

ঢাকা: প্রতিবছর ২৫শে মে, বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। এই দিনটি শুধুই তার জন্মদিন নয়, বরং বাঙালির চেতনায় এক শক্তিশালী দীপ্তি—যা আমাদের সাহসী হতে শেখায়, প্রতিবাদ করতে শেখায় এবং ভালোবাসতেও শেখায়।

এক কবির অসাধারণ যাত্রা

১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া নজরুল শৈশব থেকেই জীবনসংগ্রামের সাথে পরিচিত হন। কখনো লেটোর দলে গান গেয়েছেন, আবার কখনো সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষমেশ কলমই হয়ে উঠেছিল তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প—সবকিছুতেই নজরুল তাঁর নিজস্ব ছাপ রেখে গেছেন।

বিদ্রোহের সেই আগুন

নজরুলের কবিতা শুরু থেকেই ভিন্ন। যখন সবাই শুদ্ধ প্রেম ও প্রকৃতির কথা বলছে, তিনি লিখলেন:

‘‘বল বীর –
আমি চির উন্নত শির!’’

এই কণ্ঠস্বর ছিল যুগবিপ্লবী। তার লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা যেন শোষিতের মুখে ধ্বনিত প্রতিবাদের মন্ত্র। তিনি গর্জে উঠেছিলেন অসাম্য, অন্যায় ও ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে। সেই সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর হিসেবে নজরুল হয়ে ওঠেন একটি প্রজন্মের প্রেরণা।

প্রেম ও মানবতার কবি

তবে নজরুল শুধুই বিদ্রোহের কবি নন। প্রেম, ভালোবাসা, করুণা আর মানবতার কবিও তিনি। তার কবিতায় যেমন বিদ্রোহের আগুন, তেমনি রয়েছে গোধূলির ম্লান আলো, প্রেমিকার চোখের জলে গলে যাওয়া সুর।

‘‘তুমি হাতখানি যবে রাখো মোর হাতের পরে
মোর কণ্ঠ হতে সুরের গঙ্গা ঝরে।’’

এই স্নিগ্ধ প্রেমই তাকে মানুষের কাছে আরও আপন করে তোলে।

নজরুল সঙ্গীত: ধ্রুপদী আবেগের অনন্য ধারা
নজরুলের সঙ্গীতকে ‘নজরুল গীতি’ বলে ডাকা হয়। এক হাজারেরও বেশি গান রচনা ও সুরারোপ করে তিনি বাংলা গানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁর গানে রয়েছে ইসলামী ভাবধারা, ভক্তি, প্রেম, দেশপ্রেম, এবং হিন্দু-মুসলিম একতার চিরন্তন আহ্বান।

বিজ্ঞাপন

‘‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ।’’

এই গান আজও ঈদের আনন্দকে পূর্ণ করে তোলে।

আরেকদিকে,

‘‘মোর প্রিয়ে তুমি কোথায়?’’
বা
‘‘দুর্গা দুর্গতি নাশিনী, দুর্গতিহারিণী মা’’
—এই গানগুলোতে হিন্দু ভক্তির সুর, নজরুলের অসাম্প্রদায়িক দর্শনকে তুলে ধরে।

অন্তিম পর্ব ও চিরন্তনতা

দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট নজরুল চলে যান অনন্ত যাত্রায়। তবে তাঁর গান, কবিতা ও দর্শন আজও জীবন্ত, প্রাসঙ্গিক এবং প্রেরণাদায়ী। তিনি শিখিয়েছেন—ভালোবাসা দিতে হয়, নিতে নয়। বিদ্রোহ করতে হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিন্তু ঘৃণা নয়, ভালোবাসার পথে।

আজকের প্রেক্ষাপটে নজরুল

এই সময়ে দাঁড়িয়ে কাজী নজরুল ইসলামের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে যে বৈষম্য, সহিংসতা, আর ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার বিপরীতে নজরুল আমাদের শিক্ষা দেন—ভালোবাসার, সহমর্মিতার, এবং একতার। তাঁর কণ্ঠস্বর যেন আজও বাতাসে ভেসে আসে, আমাদের মনে করিয়ে দেয়:

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

সারাবাংলা/এফএন/এমপি

‌ জন্মদিন কবি কাজী নজরুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর