Sunday 25 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সোমবার এনবিআরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি, বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানিও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ মে ২০২৫ ১৭:৪৪ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১৯:৪৮

ঢাকা: এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৪ দফা দাবি আদায়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধসহ পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির অধীনস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আগামীকাল সোমবার (২৬ মে) এনবিআরের অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠান ফুল শাট ডাউনে যাচ্ছে। এনবিআরে ৫ দিনের কলমবিরতি ও ২ দিনের কর্মবিরতি পালন হলেও এতোদিন আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক ছিলো। তবে সোমবার শুধুমাত্র ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা চালু থাকবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৫ মে) রাজধানীর এনবিআর ভবনে এনবিআর সংষ্কার ঐক্য পরিষদ আয়োজতি এক প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানানো হয়। এদিন ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন উপ-কমিশনার (দ্বিতীয় সচিব) আব্দুল কাইয়ুম ও উপ কর কমিশনার (দ্বিতীয় সচিব) মিজ রইসুন নেসা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘রাজস্ব ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার কী কারণে, কার প্রভাবে বা কোন অজুহাতে এখনো বাস্তবায়ন করছে না, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যেহেতু আমাদের চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি পূরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ হতে অদ্যাবধি সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়নি, সেহেতু আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামীকাল সোমবার ( ২৬ মে) থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। তবে, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে আমাদের মূল চারটি দাবি পূরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করার জন্য আমরা সরকারকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমাদের কর্মসূচির ফলে সম্মানিত করদাতা ও সেবাপ্রার্থীগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে তাদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, আমরা এটাও জানিয়ে রাখতে চাই, আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করব।’

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

দাবি আদায়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার তথ্য তুলে ধরা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে দেশের সকলেই জ্ঞাত আছেন যে, সরকারের সঙ্গে এই অধ্যাদেশ বিষয়ে মতপার্থক্য নিরসনে পরামর্শক কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার কোনো মতৈক্যে পৌঁছায়নি। সেই প্রেক্ষিতে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, রাজস্ব সংস্কারের খসড়া প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপে এনবিআরের চেয়ারম্যান মহোদয় চরম অসহযোগিতা করে আসছেন এবং সরকারকে ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা তার পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকি বিষয়ে সহযোগিতা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এছাড়াও, কিছুদিন আগে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরী করেন। বর্তমানে বিভিন্ন উপায়ে তিনি সরকারের সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের গঠনমূলক ও সার্থক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চরূপে অসহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতি রেখে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী, স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব এজেন্সি হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব নীতি পৃথকীকরণের পরিকল্পনার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা জানাতে চাই, রাজস্ব আহরণের মতো একটি জটিল ও বিশেষায়িত ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের জন্য কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সকল অংশীজনের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব নীতি প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য আমরা দাবি করে আসছি। দেশবাসীকে আমরা আবারও জানাতে চাই, অধ্যাদেশে জারিকৃত রাজস্ব মডেলের অকার্যকারিতার বিষয়ে সিভিল সোসাইটিসহ সমাজের অন্যান্য অংশীজনও আশংকাও প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করছি, সরকার এ অধ্যাদেশ বাতিল করে সমাজের অংশীজনদের বিশেষজ্ঞ মতামত ও আমাদের অভিজ্ঞতালদ্ধ পর্যবেক্ষণকে পুনর্বিবেচনা করবে।’

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ, যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করার স্বার্থে জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিলসহ চারটি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিগত ১৪ মে থেকে অদ্যাবধি আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে আসছি। এ দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে গত ১৪ থেকে ১৫ মে এবং ১৭ থেকে ১৯ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে আংশিক কলম বিরতি এবং ২৪ থেকে ২৫ মে তারিখে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হয়।

এদিকে, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি চলে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির অধীনস্থ কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ। শনিবারের মতো রোববারও (২৫ মে) এনবিআর ভবনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এনবিআর ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড ও নানা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা গেছে। এনবিআর ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের বিভিন্ন রুমে অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কোনো কোনো রুমের মূল ফটকে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলছে এমন লেখা সম্বলিত কাগজ ঝুলছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এসআর

আমদানি-রফতানি এনবিআর এনবিআর বিলুপ্তি কর্মবিরতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর