ঢাকা: সরকারের আশ্বাসে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৪ দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রোববার (২৫ মে) এনবিআর ঐক্য সংস্কার পরিষদের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন না করে কার্যকর করা হবে না বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর পর রাত সাড়ে ৭টায় বৈঠকে বসে এনবিআর ঐক্য সংস্কার পরিষদ। বৈঠক শেষে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এই সংগঠনের ব্যানারেই দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছিলে এনবিআর’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এনবিআর ঐক্য সংস্কার পরিষদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না; বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা হবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়ণের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে এবং অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে টেকসই রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই প্রত্যয়কেও আমরা স্বাগত জানাই। এর ফলে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রাজস্ব এজেন্সি প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করল বলে আমরা মনে করি। সরকারের এই ঘোষণার ফলে আমাদের এতদিনের দাবি ও কর্মসূচির যৌক্তিকতা দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সোমবার (২৬ মে) থেকে ঘোষিত কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমাদের দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি, সরকার খুব শিগগিরই আমাদের দ্বিতীয় দাবির পক্ষে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে।
এরই ধারাবাহিকতায় এর আগে ঘোষিত এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টায় এনবিআর প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিং করে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৌলিক চারটি দাবি ছিল
১. জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে;
২. অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে;
৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং
৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি পৃথকীকরণের কাঠামো কিরূপে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথকীকরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সকল সংশোধনী আনা হবে। উল্লেখ্য, প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না।’