ঢাকা: এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে সরকারের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিলেও আগামী ৩ দিনের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে এনবিআর ভবনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এই সংগঠনের ব্যানারেই এনবিআরে ৫ দিনের কলমবিরতি ও ২ দিনের কর্মবিরতি পালন করা হয়।
এসবের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের রাজস্ব খাত। সোমবার (২৬ মে) থেকে আমদানি রফতানিসহ সব ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। পরে সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশ সংশোধন করার আশ্বাস আসে। পরে রোববার (২৭ মে) রাতেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ মে) প্রেস ব্রিফংয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ২৯ মে-এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। উল্লেখ্য, তার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার চরম সংকট তৈরি হওয়ায় এই দাবির ধারাবাহিকতায় ইতঃপূর্বে ঘোষিত এনবিআর এর চেয়ারম্যানের সাথে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার কর-রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, কর-রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান, দক্ষতা ও বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান পদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব প্রদান করবেন। আমাদের আরেকটি দাবির প্রেক্ষিতে আমরা আশা করি, সরকার খুব শীঘ্রই রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আশা করে, আগামী ৩১ জুলাই তারিখের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর লক্ষ্যে সরকার খুব শীঘ্রই আলোচনা শুরুসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দৃশ্যমান করবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের বিগত কয়েকদিনের এই কর্মসূচির ফলাফল হিসাবে আগামী দিনে দেশে একটি টেকসই ও জনবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না; বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা হবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়ণের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। একইসাথে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে টেকসই রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই প্রত্যয়কেও আমরা স্বাগত জানাই। এর ফলে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রাজস্ব এজেন্সি প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করলো বলে আমরা মনে করি। সরকারের এই ঘোষণার ফলে আমাদের এতদিনের দাবি ও কর্মসূচির যৌক্তিকতা দেশবাসীর নিকট প্রমাণিত হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারির পরপরই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ২৬ মে থেকে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির কর্মসূচি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে আজ (২৬ মে) থেকে সকল দফতরে পূর্ণ উদ্যোমে কাজ চলছে। তবে, আমাদের দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিটি এখনও পূরণ হয়নি। আমরা আশা করছি, সরকার খুব শীঘ্রই এই দাবির পক্ষে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ঘোষিত এনবিআর এর চেয়ারম্যানের সাথে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৪ মে থেকে গতকাল (২৫ মে) পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচির ফলে সম্মানিত করদাতা ও সেবাপ্রার্থীগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে তাদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। দেশবাসীর স্বার্থে আমরা আমাদের কর্মসূচি ধাপে ধাপে যথেষ্ট সময় দিয়ে তীব্র করতে বাধ্য হয়েছিলাম, হঠাৎ করে নয়। প্রথমে আমরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং তারপর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি এবং অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মানার কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা লাগাতার কর্মসূচি দেইনি, বরং মাঝে বিরতি দিয়েছি, দেশ ও মানুষের অসুবিধা ও সাপ্লাই-চেইনের কথা মাথায় রেখে। আর শুরু থেকেই আমরা বাজেট, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রফতানি কার্যক্রম কর্মসূচির আওতামুক্ত রেখেছি। আমাদের এমন সদিচ্ছাই প্রমাণ করে, দেশবাসীর প্রতি সেবা প্রদানে আমাদের যে অঙ্গীকার তার প্রতি কর্মসূচি চলাকালীনও আমরা সচেষ্ট ছিলাম। আমরা মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই যদি আমাদের যৌক্তিক দাবিসমূহের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া হতো, তবে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেতো।