ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়া বহু ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরদিন হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি নতুন ত্রাণ সংস্থার প্রধান। সংস্থাটি সোমবার থেকে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল।
জেইক উড, গত দুই মাস ধরে -গাজা এইড ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি রোববার (২৫ মে) এক বিবৃতিতে বলেন, সংস্থাটি মানবিকতা, নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতা এই চারটি আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে পারছে না, এজন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এই পদত্যাগের ঘটনায় গাজায় নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে বিরাজমান জটিলতা আরও গভীর হল। জাতিসংঘ ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা শুরু থেকেই এই ফাউন্ডেশনকে বয়কট করে আসছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম নিরপেক্ষতার নীতিকে লঙ্ঘন করবে।
ইসরায়েল অবশ্য বলেছে, তারা সরাসরি ত্রাণ বিতরণে জড়িত থাকবে না, তবে পুরো উদ্যোগে তারা নিরাপত্তা সহায়তা দেবে। এর আগেও ইসরায়েল একই ধরনের একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিল।
তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত সপ্তাহে ইসরায়েল সীমিত আকারে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে প্রায় তিন মাসের অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত দুই মিলিয়নের বেশি মানুষের জন্য এটি ছিল প্রয়োজনীয় খাদ্যের সামান্য অংশ মাত্র।
ফাউন্ডেশনটি জানিয়েছিল, সোমবার (২৫ মে) থেকে তারা বেসরকারি ঠিকাদারদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানো শুরু করবে এবং সপ্তাহের শেষ নাগাদ ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সহায়তা করার লক্ষ্য রয়েছে।
সুইজারল্যান্ড-নিবন্ধিত এই ফাউন্ডেশনকে কঠোর সমালোচনার মুখে ফেলেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত এই ত্রাণ পরিকল্পনা গাজার দুই মিলিয়নের বেশি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
এই নতুন উদ্যোগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে চারটি প্রধান বিতরণ কেন্দ্র থাকবে। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের জন্য সম্ভাব্যভাবে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে ত্রাণ কর্মকর্তারা।
তবে পুরো কার্যক্রম কিভাবে চলবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। যারা এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠাতে পারবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত।
এদিকে হামাস এই নতুন ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ত্রাণ ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ভেঙে অরাজকতা সৃষ্টি করবে, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেবে, এবং যুদ্ধকালে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে।
ইসরায়েল বলছে, এই ব্যবস্থা হামাস থেকে ত্রাণকে আলাদা রাখার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। তারা হামাসকে ত্রাণ চুরি করে জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। তবে হামাস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।