ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্যে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ পশু পাওয়া যাবে। এবার কোরবানির অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকার ছাড়িয়ে যাবে। চামড়ার দাম কমিয়ে রাখা হয়েছিল মাদরাসাগুলোকে ধ্বংস করার জন্য। তাই দেশের প্রাণিসম্পদ ও কৃষি উন্নয়নে কৃষি কমিশন গঠন করতে হবে।
সোমবার (২৬ মে) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত ‘দেশীয় পশুতে কোরবানি: পশু ও চামড়া ব্যবস্থাপনায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিএজেএফ সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও লাল তীর লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট (বিডি) লিমিটেডের পরিচালক তাবিথ আউয়াল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. বয়জার রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার কোরবানির অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কোরবানি আমাদের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়।’
প্রান্তিক খামারিদের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় খামারিরা। আমি রাজশাহীতে গিয়ে অবাক হয়েছি। তারা বলছে, পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্থানীয়ভাবে গরু-ছাগল পালনের আগ্রহ বেড়েছে। সময় বদলে যাওয়ায় এখন বাড়ি বাড়ি গরু-ছাগল পালন করছেন নারী খামারি ও উদ্যোক্তারা। এখন কোরবানিতে বাইরের দেশের ওপর নির্ভরতা নেই বললেই চলে।’
চামড়া শিল্পে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকার বিনামূল্যে লবণ বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে। কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করে বিদেশে রফতানি করা হবে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘প্রাণিসম্পদে সাপ্লাই চেইনে নজর দিতে হবে। অতীতে এ খাতের কী ক্ষতি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। এখন এই খাতকে এগিয়ে নিতে কী করতে হবে তা আমাদের ভাবতে হবে। বাংলাদেশ বর্তমানে মাংস রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে। পাশাপাশি দুধ উৎপাদনেও নজর দিতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে প্রাণীর যে আধ্যাত্মিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেই মর্যাদা অন্য কোনো ধর্মে দেওয়া হয়নি। এমন কোনো প্রাণী কোরবানি করতে পারবেন না, বিক্রি করতে পারবেন না; যে প্রাণী অসুস্থ। চামড়ার দাম কমিয়ে রাখা হয়েছিল মাদরাসাগুলোকে ধ্বংস করার জন্য। এটি করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে, যাতে মাদরাসাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।’
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক বলেন, ‘আমরা লোকাল ব্রিড ও ক্রস ব্রিড উভয়েই গুরুত্ব দেব। বাজারে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের ঠেকাতে হবে, যাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পান।’
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে এখন সবচেয়ে বেশি বৈষম্য তৈরি হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে পশু, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্যে মিট অ্যান্ড বোন মিলের (এমবিএম) ব্যবহার হারাম অথবা হালাল নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ আলেমদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের আহবান জানান ডব্লিউএম এন্টারপ্রাইজের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি খন্দকার আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদি আলেম কমিটি এটিকে হালাল বলে মনে করে ও কমিটির অনুমতির প্রেক্ষিতে এটি আমদানি করা যায়, তাহলে পশু খাদ্যের উৎপাদন খরচ ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ( উৎপাদন) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- পজিটিভ বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফায়জুর রহমান, ডব্লিউএম এন্টারপ্রাইজের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি খন্দকার আমিনুল ইসলাম।