ঢাকা: সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে টানা দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন সচিবালয়ে কর্মচারীরা। সোমবার (২৬ মে) শেষ বিকালে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল থেকেই সচিবালয়ের প্রবেশদ্বারগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সোয়াত, বিজিবি, আনসার বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে পুলিশ, সোয়াত, আনসার এবং বিজিবির সদস্যদের অস্ত্রসস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটেও একই পরিস্থিতি। পুলিশকে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধ করে সোমবার রাতেই আদেশ জারি করেছিলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল থেকে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারছেন না। প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সাংবাদিকদেরও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বেলা ১২টার পর সাংবাদিকেরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন কী না সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে আপাতত প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) সরকারি চাকরি (অধ্যাদেশ) ২০২৫ এর খসড়্য় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। ওইদিন থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সরকারি কর্মচারীরা। সচিবালয় কর্মকর্তা- কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতৃত্বে সোমবার পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা আসে শেষ বিকালে। সে ঘোষণায় একই ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য সচিবালয়ের বাইরে থাকা সারাদেশের সরকারি দফতরে কর্মরত কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, এখন থেকে কোনো আলাদা সংগঠন কিংবা আলাদা ব্যানারে নয় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন মিলে “বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম” এর নামে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।
এরপরই রাতে মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জননিরাপত্তা বিভাগ উপসচিব মুহাম্মদ আবদুল্যাহ আল জাবেদের সই ও জারি করা আদেশে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আগামী ২৭ মে ২০২৫ তারিখ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে সকল ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এমতাবস্থায়, উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করা হয়। অধ্যাদেশটিতে চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুতের বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান শিরোনামে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে সরকারি কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকান্ডে লিপ্ত হোন, যার কারণে অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে আনুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হোন, অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কতর্ব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন তাহলে তিনি অসদাচারনের দায়ে দণ্ডিত হবেন। আর এ নিয়েই ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা বলছেন, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে সরকারি কর্মজীবিদের প্রতিবাদ বা কথা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না।