Wednesday 28 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া প্রয়োজন
আগামী অর্থবছরেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকতে পারে: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ মে ২০২৫ ১৬:০৯

ঢাকা: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকতে পারে বলে মনে করছে দেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়ে গেছে এবং বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ধারাবাহিক কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ এবং মৌসুমী চাপের কারণে আসন্ন অর্থবছরে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ থেকে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করলেও বড় ধরনের নীতি ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এটি অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৭ মে) দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক সিপিডি’র তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনায় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। সংস্থার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও মাংসের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ২০১৯ সাল থেকে ক্রমাগত বাড়ছে। দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও সীমিত প্রতিযোগিতার ফলে বাজারে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, চিনির বাজারে মাত্র পাঁচজন আমদানিকারক আধিপত্য বিস্তার করছে, যা বাজারের দুর্বল দক্ষতাকে চিহ্নিত করে। কয়েকটি খেলোয়াড়ের এ ধরনের বাজার নিয়ন্ত্রণ ভেঙে ফেলতে হবে।

বিজ্ঞাপন

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতির মধ্যে আরও শক্তিশালী সমন্বয়, সরবরাহ-সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর সমাধান, উৎপাদন বাড়ানো এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল করা, প্রতিযোগিতা কমিশন কর্তৃক কঠোর প্রয়োগ এবং বাজার পরিচালনায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদান প্রসঙ্গে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটা কি সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে দেওয়া হচ্ছে? এই বরাদ্দ দেওয়ার সময় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন যে ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়, তার বদলে এটি দেওয়া হবে। এতে সরকারি ব্যয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। কিন্তু অন্যদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় করা রাজস্বের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ প্রেক্ষিতে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে বছরের বাকি সময়ে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। অর্থবছর শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এ সময়ে এটা আদায় করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এর আগে গত মার্চে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছিল সিপিডি।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তা না হলে কর্মসংস্থান হবে না; প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে। দারিদ্র্য বেড়ে যাবে। এতে বৈষম্যও বাড়বে। তাই এখন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া প্রয়োজন। সেটা ডিসেম্বর, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি হোক। বিষয়টি হলো, সুনির্দিষ্ট সময় দেওয়া দরকার।

নির্বাচনের বিষয়ে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে একদম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গেছে, বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। ইতিমধ্যে ডিসেম্বর কিংবা জুনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ৭ থেকে ১৩ মাসের ভেতরে নির্বাচন হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন হয়ে গেলেই বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির জগতে প্রবেশ করবে, তা কিন্তু নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে হবে। ব্যাংকিং খাত, এনবিআরসহ অন্যান্য খাতের সংস্কার হলেই কেবল বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগের জন্য গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলবাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তো নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। ডিজিটালাইজেশনের জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।

সারাবাংলা/আরএস

চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সিপিডি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর