ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাবি শাখা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ।
শিবিরের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনের লক্ষে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রায় সকল ছাত্রসংগঠন ডাকসুর প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে মতামত জানিয়েছে।
আরও বলা হয়, ‘প্রশাসনের রহস্যজনক অবহেলা ও ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা। সুতরাং, অনতিবিলম্বে ডাকসুর সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে, শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করবে ছাত্রশিবির।’
নিরাপদ ক্যম্পাসের লক্ষে প্রশাসনের উদ্যোগের বিষয়ে বলা হয়, ‘বর্তমান প্রশাসন চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস এলাকায় বহিরাগত ব্যক্তি ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপদ ক্যাম্পাসের বিষয়ে আশা সঞ্চার হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বৃহৎ কল্যাণ ও স্বার্থকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্রসংগঠনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন হঠকারী ও অবিবেচনা-প্রসূত সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে আমরা সেই সকল শিক্ষক ও ছাত্রসংগঠনের শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী এই তৎপরতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল কতিপয় কুচক্রী মহলের চাপে নতিস্বীকার না করে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এরই মধ্যে নেওয়া সিদ্ধান্তে অনড় থাকা।’
এ সময় সংগঠনটি নিরাপদ ক্যাম্পাসের বিষয়ে নিজেদের দাবি পুনর্ব্যাক্ত করেন। তাদের দাবিগুলো হলো-
- ক্যাম্পাস এলাকায় ভবঘুরে, অপ্রকৃতিস্থদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।
- পুরো ক্যাম্পাস এলাকা ও ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা।
- ক্যাম্পাসের পাঁচটি প্রবেশপথে যে সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভেলেন্স বক্স রয়েছে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে সেখানে নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা করা।
- প্রয়োজন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়মিত টহল পরিচালনা করা।
ছাত্রদলকে বন্ধুপ্রতীম সংগঠন আখ্যা দিয়ে সাম্য হত্যার বিচার প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘সাম্য হত্যাকাণ্ডের অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার নিশ্চিতকরণে কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন আমাদের ভাই সাম্যের বিচার প্রক্রিয়াকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিলম্বিত না করে আমরা অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও আমরা দাবি জানাচ্ছি যে প্রশাসনিক পর্যায়ে বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগসহ সকল কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।’