Thursday 29 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট
জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কমছে

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ মে ২০২৫ ১০:২৩

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কমছে। ছবি: সংগৃীত

ঢাকা: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কমছে। এখন থেকে আর কাঠাপ্রতি নয়, বরং সারাদেশে জমি নিবন্ধনে শতাংশ প্রতি উৎসে করা কাটা হবে। আর সুর্নিদিষ্টি রেটের চেয়ে কমে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। বাজেটে এমন প্রস্তাব থাকতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় উৎসে কর বিধিমালার বিধি ৫ এর অধীনে উৎসে কর কর্তনের বিধি যৌক্তিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে কাঠাপ্রতি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কাটা হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা শতাংশ প্রতি করা হতে পারে। বর্তমানে যেখানে উৎসে করের হার ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ ছিলো সেখানে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এখন থেকে দেশের প্রতিটি জায়গায় জমি নিবন্ধনে শতাংশ প্রতি উৎসে কর কাটা হবে। দেশের অভিজাত এলাকা গুলশান থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিটি জায়গার ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি সুনির্দিষ্ট রেট করে দেওয়া হবে। সেই রেটের নিচে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। সব জায়গায় হয় দলিলমূল্যে অথবা শতাংশ হারে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অভিজাত এলাকার সবচেয়ে দামি জমির জন্য এই রেট হতে পারে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ও প্রত্যন্ত এলাকার সর্বনিম্ন জমির ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ১ হাজার টাকারও কম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, জমির কেনার ক্ষেত্রে উৎসে কর কিছুটা যৌক্তিকীকরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে সব জমি শতাংশ প্রতি করের আওতাভুক্ত হচ্ছে। আগে এটা ছিল কাঠাপ্রতি, এখন এটা শতাংশ হারে হয়ে যাবে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এসব জায়গায় আগে সর্বনিম্ন শতাংশ পদ্ধতিতে ছিল- এখন পুরো বাংলাদেশেই শতাংশ প্রতি সর্বনিম্ন দাম অথবা শতাংশ প্রতি পার্সেন্টেজে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রেশেন উৎসে কর একটু কমবে। তবে এর ফলে রাজস্ব কমবে না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরণের কর ও ফি রয়েছে। আগামী অর্থবছর এটি কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।

এ বিষয়ে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার উৎসে কর কমাচ্ছে। কিন্তু আগে মৌজা রেটে জমি নিবন্ধন হতো। কিন্তু এখন তা করা যাবে না। ফলে উৎসে কর কমালেও এতে খুব বেশি লাভ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আগে মৌজার দাম নির্ধারণ করা হতো। এখন মৌজা হিসাবে দাম নির্ধারণ করা হবে না। বর্তমান বিক্রয়মূল্য হিসেবে নির্ধারণ করার কথা হচ্ছে। এতে খুব বেশি সুবিধা হবে না। বরং জমি রেজিস্ট্রেশনে খরচ আরও বেড়ে যাবে।’

জানা গেছে, ২০২৩ সালে জমি নিবন্ধনে মৌজা ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করে সরকার। তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা ও এর বাইরে অবস্থিত জমিকে মৌজা অনুযায়ী ‘ক’ থেকে ‘ঙ’ পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ঙ শ্রেণির জমির রেজিস্ট্রেশন ফি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। আগে এসব জমির বিক্রয় মূল্যের ৮ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান ছিল। কিছু ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের টাকার পরিমাণ কমানো হয়। যেমন- ঢাকা জেলার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত মৌজার মধ্যে ‘ঙ’ শ্রেণির ভূমির রেজিস্ট্রেশন ফি প্রতি কাঠার বিক্রয় মূল্যের ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ অথবা পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি সেটা পরিশোধ করতে হয়।

একইভাবে ঢাকার ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও, শিল্পাঞ্চল থানা, শাহবাগ, রমনা পল্টন, বংশাল, নিউ মার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত সব মৌজার প্রতি কাঠার রেজিস্ট্রেশন ফি ৬ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি, সেই হারে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ‘ক’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণির মৌজায় ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বা বাণিজ্যিক জায়গা নিবন্ধনে প্রতি বর্গফুটে ৮০০ টাকা অথবা দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়, সেটি অতিরিক্ত কর হিসেবে দিতে হয়।

আর ‘ঙ’ শ্রেণির মৌজার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৫০০ টাকা বা দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়, সেটি হবে অতিরিক্ত কর। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে অতিরিক্ত কর ৩০০ টাকা অথবা দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়। আর জমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এসব করের হারে পরিবর্তন আসছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

উৎসে কর কমছে কাঠা জমি রেজিস্ট্রেশন শতাংশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর