রাজবাড়ী:
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। [স্বাধীনতার সুখ/রজনীকান্ত সেন]
বাবুই পাখি সত্যিকার অর্থেই শিল্পী পাখি। তাল বা খেজুর গাছে নিপুণভাবে বাসা তৈরি করতে তাদের জুড়ি নেই। এ পাখির রয়েছে অসাধারণ বৈজ্ঞানিক ক্ষমতাও। কিন্তু আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে অন্যান্য জেলার মতো রাজবাড়ীতেও বাবুই পাখি অনেকটা বিলীন হতে চলেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগেও গ্রাম কিংবা শহরেও সড়কে পাশের তালগাছে এদের শৈল্পিক বাসা ও বিচরণ দেখা যেত। ধারণা করা হচ্ছে, তালগাছ কমে যাওয়ায় এদের বিচরণ কমে গেছে।
খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসাটি শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয়। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমিসংলগ্ন রেললাইনের পাশে একটি তালগাছে দেখা মিলল বাবুই পাখির বাসা। সেই তাল গাছটিতে প্রায় ১০০টি বাসা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লোকোশেড বধ্যভূমির রেললাইনের পাশে তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। সেইসঙ্গে পাখির কিচির-মিচির শব্দে জুড়িয়ে যায় মন। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর ধরে বাবুই পাখি বাসা বাঁধতে শুরু করেছে এই গাছে। এই বাসা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে।
বাবুই পাখির বাসা দেখতে আসা সোহেল নামে এক তরুণ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একসময় প্রচুর তালগাছ ছিল। সেই তালগাছগুলো লোকজন কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ফরম্যাটে বিক্রি করছে। এতে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে তাল গাছ। তালগাছে বাবুই বেশি বাসা বাঁধে। আমাদের উচিত অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে তালগাছ রোপন করা। এতে একদিকে বিলুপ্তপ্রায় বাবুই পাখি বাড়বে, অন্যদিকে বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষা পাবে।’
আরেক দর্শনার্থী অনিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘুরতে এলে এই বাবুই পাখির বাসার এখানে আসি। শহরে ও গ্রামে এখন এমন বাবুই পাখির বাসা দেখাই যাই না। এই গাছে বেশ কয়েকবছর ধরে বাবুই পাখিগুলো রয়েছে।’
বধ্যভূমি এলাকার বাসিন্দা শাহীন সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গাছটিতে প্রাই একশ’ বাবুই পাখির বাসা রয়েছে। এই পাখি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। বাবুই পাখির এমন বাসা আশেপাশে আর নেই। বিকেল হলেই অনেক লোক বাবুইর বাসা দেখতে আসে। বাতাস হলে দোলে, তখন দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এছাড়া তাদের ডাক শুনলে মন ভরে যায়।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে। কারণ উঁচু তাল গাছ, খেজুর গাছ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো কিছু কিছু কেটে ফেলা হচ্ছে, আবার বিভিন্ন কারণে মারাও যাচ্ছে কিছু গাছ। আর এই গাছের স্বল্পতার কারণে বাবুই পাখির বাসা বাঁধার উপযুক্ত স্থান কমে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বিলুপ্ত হতে চলেছে তাদের বংশবৃদ্ধি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবুই পাখি খেত থেকে বিভিন্ন পোকা মাকড় খায়। এটা জনজীবনের জন্য আর্শীবাদ। তাই আমাদের বেশি বেশি তাল গাছ লাগাতে হবে। আবার প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে হবে। প্রকৃতিকে আবার বাবুই পাখিদের পছন্দের মতো করে সাজাতে হবে। তাহলে এই পাখিগুলো আবার প্রকৃতিতে ফিরে আসবে।’