ঢাকা: গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়া আর্থিক বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালীসহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ও শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংক। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১’ এর ২২ ধারা অনুযায়ী গত ২১ মে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান।
নির্দেশ প্রাপ্ত ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ, লাভ-ক্ষতির হিসাব ও মূলধন পর্যাপ্ততা সম্পর্কিত তথ্যে ঘাটতির কথা তাদের আর্থিক বিবরণী ও পুঁজিবাজারের তথ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে দাখিলকৃত তথ্য ও নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোকে এক মাসের মধ্যে নিজ নিজ বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত বাস্তবসম্মত ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
জানা যায়, গত মার্চে লভ্যাংশ দেওয়ার নতুন নিয়ম জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী, ২০২৪ সাল থেকে যেসব ব্যাংক প্রভিশনিংয়ে ডেফারেল সুবিধা নেবে তাদের লভ্যাংশ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। আগামী বছর থেকে যেসব ব্যাংকের মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি- সেগুলোর ওপরও এমন বিধি-নিষেধ দেওয়া হবে।
এদিকে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারলে ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের ‘আস্থা’ কমে যেতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। এ প্রেক্ষিতে নির্দেশনা শিথিল করতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন করা হলেও অনড় অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর মতো মুনাফা ব্যাংকগুলোর নেই। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অধিকাংশকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রভিশন ঘাটতি পূরণে ডেফারেল সুবিধা নেওয়া ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, তবে ঘাটতি সমন্বয় না করেও ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে পারবে এসব ব্যাংক। এর ফলে পুঁজিবাজারের তথ্যে প্রকৃত প্রভিশন ঘাটতি দেখানো হলেও ব্যাংকের ব্যালান্স শিটে তা দেখানো হবে না।
জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে মাত্র ১৬টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিগত বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পেরেছে। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোকে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে এক মাস সময় বাড়িয়ে চলতি ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা যায়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। অন্যদিকে ওয়ান ব্যাংক মুনাফা করলেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া শেষ সময়ে ঢাকা ব্যাংককে লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ইতোমধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।