ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দাম্পত্য কলহ, প্রেমের জটিলতা, কঠিন রোগ থেকে মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদি সমাধানের বিজ্ঞাপন দিয়ে নারীদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও নিয়ে বশীকরণ ও ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে মো. আব্দুস সবুর (২৫) নামের একজন ভুয়া তান্ত্রিককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
বুধবার (২৮ মে) বিকেলে বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তান্ত্রিক আসাদ আহমেদ চৌধুরী নামক মিথ্যা পরিচয় ধারণ করে নারীদের বশীকরণ ও ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎকারী এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃত আসামির নাম মো. আব্দুস সবুর (২৫)। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। আব্দুস সবুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ৭টি পেজ খুলে নিজেকে ভারতীয় কামরূপ কামাখ্যার তান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এসব পেজে তিনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন—যেমন দাম্পত্য কলহ, প্রেমের জটিলতা, কঠিন রোগ থেকে মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদি। ভুক্তভোগীরা এসব পেজে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে সংযুক্ত করতেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ শুরু হলে সে প্রথমেই আশ্বস্ত করত, কোনো টাকা লাগবে না—শুধু আধ্যাত্মিক নিয়ম মেনে চললেই হবে। এরপর ধাপে ধাপে শুরু হতো প্রতারণার অভিনব কৌশল। প্রথমে ‘কাফনের কাপড়’, ‘চুল’, বা কোনো ‘বিশেষ পণ্য’ কেনার জন্য টাকা দাবি করত। বলত, এসব আচার করতে হয় এবং এগুলো না হলে জিনের প্রভাব যাবে না। সবচেয়ে ভয়াবহ প্রতারণার ধাপ ছিল ‘পটাশিয়াম ও মিষ্টি’ নামক এক অভিনব ফাঁদ। ভুক্তভোগীকে বলা হতো গভীর রাতে গোসল করে ধ্যান করতে এবং তার দেওয়া নিয়মে হাতে পটাশিয়াম নিয়ে সেই হাতেই মিষ্টি রাখতে। পটাশিয়াম ও মিষ্টির সংমিশ্রণে রসায়নিক বিক্রিয়ায় হালকা বিস্ফোরণ বা আগুন সৃষ্টি হতো—ফলে হাতে ফোসকা পড়ত।
তিনি বলেন, এই ভয় ও আতঙ্ককে ব্যবহার করে প্রতারক বলত, “তুমি জিনের রোষে পড়েছো—এখন আরেকটা উচ্চতর সাধনা করতে হবে। এজন্য তোমার নগ্ন শরীরে বিশেষ তেল (পনি) মেখে আমার নির্দেশ অনুযায়ী ছবি বা ভিডিও পাঠাতে হবে।” ভয় পেয়ে কেউ নগ্ন ছবি বা ভিডিও পাঠালে শুরু হতো ব্ল্যাকমেইল। ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। ভিকটিমরা মানসম্মান ও সামাজিক বিবেচনায় অনেকেই মুখ খুলতে সাহস করতেন না, বরং একপর্যায়ে আরও অর্থ দিতে বাধ্য হতেন।
তিনি আরো বলেন, এই ধরণের শিকারদের একজন নারী গত বছরের ২০ জানুয়ারি ফেসবুকে “তান্ত্রিক আসাদ চৌধুরী” নামক একটি পেজের মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচিত হন। আসামি নিজেকে তান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাদিনীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। একপর্যায়ে আসামি মোবাইল ফোনে বাদিনীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১৪,১২,৮০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী উক্ত ঘটনায় কুমারখালী থানার মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার সিআইডি গ্রহণ করার পর সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এর এএসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি টিম গত ২৭ মে রাত ১১টায় কুমিল্লার বুড়িচং থানাধীন মোকাম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামিকে গ্রেফতার করে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের সাইবার প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তান্ত্রিক পরিচয়ে বা আধ্যাত্মিকতার নামে যেকোনো ধরনের অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা থেকে সাবধান হোন এবং যে কোন প্রকার ডিজিটাল প্রতারণা অথবা সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি ঢাকার নিম্নোল্লিখিত হটলাইনে যোগাযোগ করুন। হটলাইন নম্বর সমূহ- ০১৩২০০১০১৪৬; ০১৩২০০১০১৪৭; ০১৩২০০১০১৪৮।