Thursday 29 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ মে ২০২৫ ১৯:১৭ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ২০:০৪

তারুণ্যের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: কোনো রাখ-ঢাক ছাড়াই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আবারও বললেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আবারও আমরা বলতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ‘‘দেশকে এগিয়ে নিতে বিএনপির একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার নির্বাচিত সরকার। কিন্তু, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ‘অল্প’ ও ‘বেশি’ সংস্কারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এ আলোচনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।’’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৮ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি ১০ মাস পার হলেও নির্বাচনের ঘোষণা করছে না সরকার। আমরা বলে দিতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।’

তারুণ্যের সমাবেশে দলটির সিনিয়র নেতারা। ছবি: সারাবাংলা

তিনি বলেন, ‘আগের সরকারের আমলে জনগণ আদালত অবজ্ঞার করার বিষয়টি দেখেছিল। ইশরাকের শপথ না পড়ানোয় এই সরকারের মধ্যে তার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করায় আমরা সরকারের স্বেরচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। যারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘‘পুথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানুষের সংস্কারের গুরুত্ব অনেক বেশি। নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে পিপল ‘ডেমোক্রেটিক অব নর্থ কোরিয়’। সুতরাং কী লেখা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি জরুরি মেনে চলা। নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।’’

বিজ্ঞাপন

তারুণ্যের সমাবেশে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ছবি: সারাবাংলা

তারেক রহমান বলেন, ‘একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী জনগণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে জনগণের রায় পান, তাহলে আবার সরকারে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ভোটার নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছে। এই ভোটাররা আজ পর্যন্ত ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পায়নি। পতিত স্বৈরাচারের কাছে মানুষের ভোটাধিকারের কোনো গুরুত্ব ছিল না। সুতরাং মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের দৃশ্যমান প্রস্তুতি গ্রহণ করা।’

তারেক রহমান বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে। সেখানে আমরা দেখেছি, তত্ত্বাধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। কিন্তু, আজ আমরা দেখছি দশ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।’

তারুণ্যের সমাবেশে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ছবি: সারাবাংলা

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারাই সেটা নির্বাচন করুন। আপনারা জনগণের কাছে যান, তাদের প্রত্যাশা জানার, বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের মন জয় করুন। কারণ, জনগণই বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।’

‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশে, সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে ২৬ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এর আগে, দুপুর ২টায় কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় নয়াপল্টন এলাকা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সমাবেশে আসা নেতা-কর্মী সমর্থকদের হাতে দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পায়। কেউ কেউ নেচে-গেয়ে স্লোগানে স্লোগানে কর্মসূচিতে প্রাণচাঞ্চল্য করে তোলেন।

তারুণ্যের সমাবেশে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ছবি: সারাবাংলা

মতিঝিল নটরডেম কলেজ থেকে সেগুনবাগিচা মৎসভবন ছাড়িয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এই তারুণ্যের সমাবেশে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যরা এবং তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

নয়াপল্টন, কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরেরপুল মোড়, বিজয়নগর মোড়, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় লোকজনে সয়লাব হয়ে যায়। এসব এলাকার সড়ক, লেন, অলি-অগলি বিএনপির নেতা-কর্মীতে ভরে যায়। লোকজনের উপস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।

এদিকে সম্ভব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশ সমাবেশস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি দলীয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।

সারাবাংলা/এজেড/এইচআই

টপ নিউজ তারুণ্যের সমাবেশ তারেক রহমান নির্বাচন বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর