ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি নিয়ে আলোচনা সভা করেছে দ্য বাংলাদেশ ডায়লগ (টিবিডি)। বুধবার (২৭ মে) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘TBD Perspective VI: On the Diplomatic Front – South Asia and beyond’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মিডিয়া পার্টনার ছিল ‘সারাবাংলা ডট নেট’ ও ‘সময়ের আলো’।
এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ফেলো আসিফ বিন আলী।
সভায় সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও দেশের চলমান বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘একটা দেশের ভাবমূর্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য। আমি চাইলাম, আর বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়ে যাব- বিষয়টা এমন নয়। যারা বিনিয়োগ করবেন তারা আলোচনা করেই আসবেন। আর যেখানে লাভের ব্যবসা নেই সেখানে বিনিয়োগ করবেন না। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয় বলব, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থিতিশীল। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসেন দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সহযোগী হয়েই কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ স্থিতিশীল।’
এ সময় তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সূত্রপাত কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। এটা কর্মসংস্থান প্রাপ্তির আন্দোলন। বিনিয়োগ স্থগিত থাকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। প্রতিবছর পাঁচ লাখ করে তরুণ কর্মসংস্থানের সন্ধানে থাকেন। তার মানে পাঁচ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি। এই এক কোটি মানুষকে চাকরি দেওয়া যেকোনো সরকারের জন্যে চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারলেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে এবং তার প্রথম শর্ত আইনের শাসন।’
সেমিনারে আসিফ বিন আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে বাস্তবতার দিকে দেখতে হবে। কূটনৈতিক উপায়ে কাজ করতে হবে যাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা যেকোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবলে ভালোভাবেই গণ্য করে।’ বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সংকটকে খুব রোমান্টিক্যালি কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতি চলচ্চিত্রে কাজ করে বলে দেখা যায়, বাস্তবে কাজ করে না। সরকারের এর থেকে বের হওয়া উচিত। এর থেকে বের হওয়ার জন্যে রাজনৈতিক উপায়ে কাজ করতে হবে।’
তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা পলিসি অবলম্বন করেছিল; সেটা হলো- রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি করা। অন্তর্বর্তী সরকারও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শুরু করেছে। তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন অন্তর্ভুক্তি কী? জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্যে যদি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করতে হয় আমাদের জন্যে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হয় না।’
সভায় সাইমুম পারভেজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যেন বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধার হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। গত ১৫ বছরে তা হয়নি।’ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর ছোট ছোট শক্তি কাজ করছে। তারা মাঝে মধ্যে এমন কিছু আচরণ করেন যে, মনে হয় আমাদের কারও সঙ্গে শত্রুতামূলক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আসলে আমাদের সবার সঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন আমাদের স্বার্থ হাসিল হয়।’
রোহিঙ্গা ইস্যুর সমস্যা সমাধান সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সামরিকভাবে এর সমাধান হবে না। করিডোর বা চ্যানেল দিলে সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। একটা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্য একটি দেশের একটি গ্রুপকে মানবিক সাহায্য করতে পারি না। এটি কোনো যৌক্তিক কথা হতে পারে না। একটি নির্বাচিত সরকারেরই উচিত মানবিক করিডরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভবিষ্যতে যদি মিয়ানমারে ইনক্লুসিভ একটা পরিবেশ তৈরি হয় তখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধান সম্ভব।’
আলোচনা সভা সম্পর্কে দ্য বাংলাদেশ ডায়ালোগের সদস্য ইরাজ নূর চৌধুরী বলেন, ‘ইন্দো-পাক সম্পর্ক, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি, এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশি ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় নিয়ে এই আলোচনাটি হয়েছে। এতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা মূল্যায়িত হয়েছে।’