ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিয়ে আগে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও এই প্রথম তাদের ভোট প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য কয়েক ধরনের প্রক্রিয়া বা ভোটিং পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সংস্থাটি। প্রক্সি, অনলাইন, পোস্টাল ভোট- এই পদ্ধতিগুলোকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছে ইসি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দিয়ে, প্রক্সি বা পোস্টাল নয়, অনলাইন বা ই-ভোটিংয়েই আস্থার কথা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। জানা গেছে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানানোর কথা থাকলেও বিএনপি এখনো সাড়া দেয়নি। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অধিকাংশ দল তাদের মতামত দিয়েছে। ইসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ইসির ডাকে ২৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৪টি সাড়া দিয়ে তাদের মতামত দিয়েছে। যার মাঝে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সময় চেয়েছে। মতামত দেয়নি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। মতামত দেওয়া দলগুলোর মধ্যে অলনাইনে অর্থাৎ ই-ভোটিংয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে আটটি রাজনৈতিক দল, পোস্টাল ব্যালটের প্রতি সাতটি দল, প্রক্সি ভোটে চারটি রাজনৈতিক দল এবং ইসির সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা জানিয়েছে একটি দল। বাকি চারটি দল ই-ভোটিং ও পোস্টাল ব্যালটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের কমিশন প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট পদ্ধতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। সেখানে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে উপস্থাপনা ও আলোচনা হয়। পদ্ধতিগুলো হলো- অনলাইন ভোট, প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ব্যালট। এরপর ইসি সচিবালয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে ‘অ্যাডভাইজরি টিম’ গঠন করে।
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে ১২ সদস্যের ওই টিমে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক। অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, এমআইএসটির সাবেক কমান্ডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ওয়াহিদ-উজ-জামান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালিম আহমাদ খান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া ও আইন শাখার যুগ্মসচিব মো. ফারুক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রশাসক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনসুলার ও ওয়েলফেয়ার) ও এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
এমআইএসটি, ঢাবি ও বুয়েট তিনটি পদ্ধতি নিয়ে তিনটি প্রতিবেদনও দিয়েছিল কমিশনে। সে প্রেক্ষিতে গত ২৯ এপ্রিল এ বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করে কমিশন। দলগুলো তাৎক্ষণিক মতামত দিলেও দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু ১৫ দিনের জায়গায় প্রায় এক মাস পর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব সিদ্ধান্ত এলো। দলগুলো তিনটি পদ্ধতি থেকে প্রক্সি নয়, অনলাইন বা ই ভোটিংয়েই আস্থা রাখছেন।
তবে ইসি মনে করছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে ‘প্রক্সি’ ভোট উত্তম। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট একেবারেই অসম্ভব। আর অনলাইনে ভোটিং বিদ্যুৎসহ নানা জটিলতার পাশাপাশি হ্যাকিং হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে দলগুলোর মতামত নিয়ে পর্যালোচনার পর আরেকটি জাতীয় সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অংশীজনদের মতামত বা পরামর্শ পর্যালোচনা করে আগামী মাসের মধ্যেই প্রবাসীদের জন্য ভোটের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।’ তিনি জানান, সত্যিকার অর্থে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রক্সি ভোটের বিকল্প নেই। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। তবে পদ্ধতি নির্ধারণে নানা পদ্ধতিগত জটিলতায় আটকে আছে প্রকল্পটি। তাই কমিশনের কাছে আসন্ন নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জ।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটিং ব্যবস্থা চালু করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘দলগুলোর সমর্থন ছাড়া প্রবাসীদের ভোটের সব চেষ্টা বৃথা যাবে। আমরা পরবর্তী নির্বাচনে অন্তত শুরু করতে চাই, অন্তত যাত্রা শুরু হোক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শুরু করে আর এগোতে পারেনি। অনেক দেশ চালু করেছে, অনেক দেশ চালু করতে পারেনি।
কমিশন সূত্র অনুযায়ী, প্রবাসে রয়েছেন এক কোটি ৩৪ লাখের বেশি বাংলাদেশি; তাদের মধ্যে প্রায় এক কোটি নাগরিক ভোটার।