ঢাকা: অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে সংগঠনটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, ২৯ মে এর মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের আলটিমেটাম দিয়েছিল সংগঠনটি। আর এই সংগঠনের ব্যানারেই এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলমবিরতি ও কর্মবিরতিসহ আন্দোলন করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সরকার অধ্যাদেশ সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিলে আন্দোলন থেকে সরে ঐক্য পরিষদ। তবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগিতা ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘আমাদের দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিটি এখনও পূরণ হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম ২৯ মে এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। অর্থাৎ, এরই মধ্যে ঘোষিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণের বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের যৌক্তিক এই দাবি বাস্তবায়নে প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টিকারী, প্রসেস টেম্পারিং ও সকলের অগোচরে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্হাপনার মূল কাঠামো ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী এই চেয়ারম্যানের হাতে প্রকৃত সংস্কার কার্যক্রম হুমকির মুখে বিধায় আমরা আশা করছি সরকার অবিলম্বে এ বিষয়ে চূডান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার চরম সংকট সৃষ্টি হওয়ায় তাকে অপসারণের দাবির ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ঘোষিত লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত আছে এবং থাকবে। আপনারা ইতোমধ্যে অবগত আছেন যে, জারিকৃত অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছেন ও চরম অসহযোগিতা করেছেন এবং সরকারকে ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা তার পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকি বিষয়ে সহযোগিতা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন।’
আরও বলা হয়, ‘নজিরবিহীনভাবে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হা্র বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন। তিনি বিভিন্ন উপায়ে সরকারের সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের গঠনমূলক ও সার্থক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারকে শুরু থেকেই বিভ্রান্ত করে সরকারের সঙ্গে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দুরত্ব তৈরির অপচেষ্টা করে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িত ও জটিল করেছেন। তার অবস্থান অতি নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেতো।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘স্বাভাবিকভাবে উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে আমরা সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের পূর্ব পর্যন্ত তাকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।’
আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার কর-রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, কর-রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান, দক্ষতা ও বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব দিবেন।’