ঢাকা: শিশুর অধিকার, নারীর জন্য কর্ম, নারীর নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর ক্ষমতায়নকে জোরদারে সর্বশেষ ২০২৪-‘২৫ অর্থবছরের বাজেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যেখানে ২০২৩-‘২৪ সালে অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া ‘সমতার পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২৪-‘২৫ প্রকাশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) জাতীয় বাজেট ২০২৫-‘২৬ এ নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার বাজেটের কার্যকর বণ্টন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন চাই নামে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও যে প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকার জেন্ডারবান্ধব বাজেট করলেও বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পর্যালোচনা বা সমীক্ষা পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজেটে বরাদ্দের কতটুকু নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বয়ে আনলো, সে বিষয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না।
১৬ দফা সুপারিশ হলো:
- বরাদ্দকৃত বাজেটের মাধ্যমে নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, সে বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত খতিয়ান আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় উত্থাপন করতে হবে।
- মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দকৃত জেন্ডার বাজেটের কার্যক্রমগুলো কীভাবে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত, তার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতি বছর তৈরি ও জনসমক্ষে পেশ করতে হবে।
- নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নেওয়া কৌশলগুলো কতটুকু জেন্ডার চাহিদা পূরণ করছে এবং এর অগ্রগতি কতটুকু সে বিষয়ক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি গুণগত বিশ্লেষণের পরিমাপক নির্ধারণ করতে হবে।
- প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত স্পষ্টতা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট ফোকাল পয়েন্টদের তথ্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকতে হবে।
- লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত এবং মনিটরিং দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
- সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জেন্ডার ও জেন্ডার বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের সেবাদানের দক্ষতাকে বাৎসরিক কর্ম মূল্যায়নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
- নারীর জন্য জামানতমুক্ত ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে।
- সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সেবা বাড়ানো বিশেষ করে আইনি সহায়তা প্রদান, শেল্টার হোম তৈরি করা এবং সেখানে রেখে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- জেন্ডার বাজেট বিষয়ক গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বিআইডিএসসহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেন্ডার বাজেট বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে।
- নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রান্তিকতা, নারীর চাহিদা, বর্তমান বাজার বিবেচনায় উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- কৃষক নারীদের ‘কৃষক’ হিসেবে স্বীকৃত প্রদানসহ তাদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ লোকবল বাড়াতে হবে।
- সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচার বন্ধে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।
- প্রান্তিক নারীদের উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত করবার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে এবং নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।