যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের উদ্যোগে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা বর্তমানে বিবেচনার অধীনে রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। তবে তারা স্পষ্ট করেছে, প্রস্তাবটির বর্তমান রূপ গাজায় নরহত্যা ও দুর্ভিক্ষ অব্যাহত রাখবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জানান, ইসরায়েল এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সই করেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পাঠিয়েছেন।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই প্রস্তাব আমাদের জনগণের কোনো দাবিই পূরণ করে না, বিশেষত যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্নে।’
তিনি আরও বলেন, তবুও, আন্দোলনের নেতৃত্ব জাতীয় দায়িত্ব নিয়ে এর প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করছে।
হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, তারা শুক্রবার (৩০ মে) বা শনিবার (৩১ মে) আনুষ্ঠানিক জবাব দেবে।
প্রস্তাবের বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে রয়টার্সের একটি খসড়া দলিল অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। প্রথম সপ্তাহেই ২৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দেওয়ার শর্তে ১ হাজার ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ও ১৮০ জন নিহত ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এই পরিকল্পনার অঙ্গীকার দেবে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার। এছাড়া, হামাস সই করলেই গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো শুরু হবে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, প্রস্তাবটি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং অবাধ মানবিক সহায়তা প্রবেশের কোনো নিশ্চয়তা দেয় না যা তাদের প্রধান দাবি।
ইসরায়েল সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই সর্বশেষ প্রস্তাবে সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রস্তাবটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা বলেন।
১৮ মার্চ ইসরায়েল একটি ছয় সপ্তাহের সাময়িক যুদ্ধবিরতি ভেঙে পূর্ণ শক্তিতে হামলা চালানো শুরু করে। এরপর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে আরও প্রায় ৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ফলে, মোট নিহতের সংখ্যা ৫৪,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর দীর্ঘ অবরোধের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ বলছে, এই অবরোধের ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
১৯ মে ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করলেও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় একফোঁটাও নয়।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নতুন বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলেও বিতরণের সময় খাদ্যের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধও হয়ে যায়।