চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে হালদা নদী থেকে প্রায় ১৪ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা।
মৎস্য অধিদফতর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্স ল্যাবরেটরি এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এ পরিমাণ ডিম সংগ্রহের কথা জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘হালদা নদীর দুই তীরে ডিম সংগ্রহের পুরো কার্যক্রম মৎস্য অধিদফতর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে যৌথভাবে মনিটরিং করা হয়েছে। ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ করে আমরা একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছি।’
‘সকল তথ্য-উপাত্ত যাচাইবাছাই করে দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্ত ডিমের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কেজি। প্রায় ২৫০টি নৌকা নিয়ে সাড়ে ৫০০ সংগ্রহকারী এ পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করেছেন।’
প্রত্যাশিত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরে হালদা নদীতীরের জেলেরা খুব খুশি হয়েছেন বলে জানান মনজুরুল কিবরিয়া।
অমাবস্যা পার হওয়ার দুদিন পর বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যা থেকে আকাশে বজ্রপাত আর সঙ্গে শুরু হয় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ। এর মধ্যেই হালদায় নামে পাহাড়ি ঢল।

মাছের ডিম। ছবি: সারাবাংলা
প্রকৃতির এই অনুকূল পরিবেশে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২টা থেকে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট থেকে রাউজানের রামদাশ মুন্সির ঘাট পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কার্প জাতীয় প্রজনন সক্ষম মাছ বা স্থানীয়দের ভাষায় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে।
চৈত্র মাসের শেষার্ধ থেকে হালদা পাড়ের জেলেরা জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষার পর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন আহরণকারীরা। শুক্রবার (৩০ মে) দুপুর পর্যন্ত চলে ডিম সংগ্রহ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে, রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতারঘোনা, আজিমের ঘাট, মাছুয়াঘোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহীঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে। প্রতি নৌকায় গড়ে ৫ থেকে ৬ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
এরপর নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং প্রাকৃতিক মাটির কুয়াগুলোতে ডিম থেকে রেনু ফোটানোর কার্যক্রম চলছে।
চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে হালদা নদী। বিভিন্নস্থানে যেখানে সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ে, সেখানে প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।
হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।
এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
এছাড়া ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি ও ২০২৪ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি (নমুনা) ডিম সংগ্রহ হয়েছিল।