ঢাকা: বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনে রাজনৈতিককর্মীর ভূমিকায় যোগ দিয়েছে ডিএসসিসির অনেক কর্মচারীরাও। এ ছাড়া, নগর ভবনে অন্তত ৭০টি তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় থুবড়ে পড়েছে করপোরেশনের সেবা ও দাফতরিক কার্যক্রম। তবে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পরও নগর ভবনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার।
ডিএসসিসি মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলনে নামেন ইশরাকের সমর্থকরা। এরপর নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ সব বিভাগের গেটে অন্তত ৭০টি তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এ কারণে, কোনো কর্মকর্তা ভেতরে ঢুকতে না পারায় বন্ধ রয়েছে নগর ভবনের সেবা ও দাফতরিক কার্যক্রম। এ ছাড়া, ডিএসসিসির বেতনভুক্ত অনেক কর্মচারীরাও যুক্ত হয়েছেন এই আন্দোলনে। ফলে নগরবাসীদের ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আন্দোলনরত অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের রায়ের পরও ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়িয়ে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তার শপথ ও দায়িত্ব গ্রহণের দাবিতে আন্দোলনে আছি। জনগণের মেয়র ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হোক। দ্রুত তাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই আমরা।’
ডিএসসিসির কর্মচারীরা আন্দোলনে যোগদান করতে পারে কিনা জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগর ভবনের কর্মচারীরা যদি কেউ আন্দোলনে গিয়ে থাকে তাহলে আমরা দেখব। সরকারি নিয়মে যদি তারা করতে পারে করবে। আর না হলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি প্রয়োজন হয় এ নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএসসিসির প্রধান ফটকসহ সব বিভাগের গেটে তালা ঝুলছে এখনো। সিটি করপোরেশনের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। যা সঙ্গে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ব্যানারে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারারীরাও রয়েছেন। টানা ১৫ দিনের এই আনন্দোলনে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে যাওয়ায় সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও নগর ভবনের সামনে আন্দোলন চলছে। তালা খুলে দেওয়া হয়নি, আমরা কেউ ভেতরে যেতে পারছি না। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’
নগর ভবনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পুরোপুরি কার্যক্রম কখনো বন্ধ হতে পারে না। আংশিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্জ্য অপসারণ, মশক নিয়ন্ত্রণের কাজ, প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে যেসব সেবা দেওয়া হয়, গরুর হাটের কার্যক্রম, জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতির কাজ বন্ধ হয়নি। আমাদের কিছু কিছু কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, বাকিগুলো চলছে। তবে বিল সংক্রান্ত বিষয়গুলো ছাড়া বাকি সব কাজ মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে চলছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করেছি। এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, ইশরাককে শপথ যেন না পড়ানো হয় সেই রিট বৃহস্পতিবার (২২ মে) খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে ইশরাককে শপথ পড়াতে আর কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু শপথ না পড়ানোয় ১৫ দিন ধরে এখনো টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইশরাকের সমর্থকেরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুতে সাংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এর পর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ডিএসসিরি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়াকে প্রশাসকের পাশাপাশি ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনি জটিলতা না থাকলে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর উদ্যোগ নেবে সরকার। সেজন্যই ডিএসসিসির প্রশাসককে নতুন এই দায়িত্ব দেওয়া।
অপরদিকে, ২০২০ সালের ১৬ মে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩০ জুন প্রথম বোর্ডসভা হয়। আইন অনুযায়ী করপোরেশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৯ জুন। এখন যদি ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তিনি এক মাস দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।