Sunday 01 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইশরাকের শপথ ইস্যুতে বল ফের ইসির কোর্টে

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ মে ২০২৫ ১০:৪৩

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথের ইস্যুটি ফের গড়াল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোর্টে। এর আগে আদালত থেকে নির্বাচন কমিশন, সেখান থেকে স্থানীয় সরকার ও আইন মন্ত্রণালয়, এরপর ফের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট হয়ে আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। এখন আবার আপিল বিভাগ থেকে ফিরে এলো নির্বাচন কমিশনে।

সবশেষ গত ২৯ মে আপিল বিভাগ জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ পাঠ করানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাই সবার চোখ এখন ইসির দিকে। এবার কী সিদ্ধান্ত নেবে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি? যদিও এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইশরাক হোসেনের বিষয়ে দেওয়া আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ইয়াসিন খান সারাবাংলাকে জানান, সর্বোচ্চ আদালত ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের কাছে যে মতামত চেয়েছিল, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছে। আপিল বিভাগ বলেছেন, সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে ইসি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী উলটো নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার কথা মন্ত্রণালয়ের।

তিনি বলে, ‘গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের কাজ শেষ হয়ে যায়। এ বিষয়ে যেহেতু আইনে কোনো কিছু স্পষ্ট করে উল্লেখ নাই, তাই ইসি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের মতামত দিতে দেরি হওয়ায় ১০ দিনের আইনি বাদ্ধবাধকতা থাকায় গেজেট প্রকাশ করে কমিশন। আর গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আইনগতভাবে ইসির কিছু করার এখতিয়ার নেই।’ ইসির আইনজীবী জানান, এখন আইন অনুযায়ী, ইশরাকের শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তাই নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

এ নিয়ে নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু নতুন, আর এটা আদালতের মাধ্যমে এসেছে। তাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ বা মেয়াদের বিষয়ে স্পষ্ট হতে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যায়। কারণ, আমাদের বর্তমান আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই।’

ঘুরে ফিরে ফের নির্বাচন কমিশনের কাছেই ফিরে এসেছে বিষয়টি। এবার কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার ও জানার বিষয়। এদিকে, অবিলম্বে শপথ গ্রহণের আয়োজন না করলে নগরবাসীকে নিয়ে আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ২৯ মে দুপুরে নগর ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএসসিসির সামনে টানা ১৬ দিন ধরে চলছে আন্দোলন। ১৪ মে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, ইশরাকের সমর্থকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর ফের কর্মসূচি চলছে। ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হলো। আমরা যে শুরু থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশে আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আদালতে যে মামলা করেছিলাম পূর্ণাঙ্গ আস্থা আমরা রেখেছিলাম, সেটা ফের প্রমাণিত হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়িয়ে আদালত অবমাননার কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটাও প্রমাণিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। তারা নির্বাচন কমিশন, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। আমাকে মেয়র হিসেবে যে ঘোষণা দিয়েছে, এর পর আমাকে শপথ পড়ানোর যে দায়িত্ব ছিল, সেটা পালনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এর পর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম

ইশরাক হোসেন ইসি ডিএসসিসি নির্বাচন কমিশন বল শপথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর