Sunday 01 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের পুশইন মানবতা বিরোধী কাজ: সিপিবি সভাপতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ মে ২০২৫ ১৭:৩৯ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ ১৯:২৪

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শাহআলম।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সীমান্তে ভারতের পুশইন মানবতা বিরোধী কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম।

শনিবার (৩১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দর, করিডোর নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নগরীর চেরাগি পাহাড়ে ‘বৈঠকখানা মিলনায়তনে’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ভারতের পুশইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, ‘সীমান্তে ভারত যেটা করছে, পুশইন, এটা মানবতা বিরোধী কাজ। আমরা ভারতের পুশইনের বিরুদ্ধে। এ তৎপরতা কেন ? দুইদেশের সরকার পর্যায়ে আলাপ করে এটা সমাধান করা যায়। কিন্তু এটা জিইয়ে রাখা কেন ?’

বিজ্ঞাপন

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ ২০১৪ সালে ভোট দিতে পারেনি, ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারেনি, ২০২৪ সালে ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনার আমলে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। লড়াইটা হয়েছে মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হল, মিনিমাম সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া, দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু উনারা সেটা না করে বড় বড় এজেন্ডা সামনে এনে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

‘সরকারকে বলব, অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেটা অক্টোবরে হতে পারে, নভেম্বরে হতে পারে, ডিসেম্বরে হতে পারে। তবে ডিসেম্বরের বাইরে কোনোভাবেই না। এটা জাতির আকাঙ্খা। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প আর কিছু নেই। আমরা কোনো অসাংবিধানিক কেউ ক্ষমতায় আসুক, সেটা চাই না। আমরা চাই গণতন্ত্র, আমরা চাই নির্বাচন। মানুষের দম বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের দম বন্ধ হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে, জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নির্বাচন হতে হবে, রেগুলার সরকার লাগবে। সরকার প্রধান বলেছেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা। আমরা মনে করি, যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এসব ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শাহআলম বলেন, ‘অলরেডি আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারও জন্য আপনার দরজা সবসময় খোলা, আর কেউ চারদিন অপেক্ষা করেও আপনার সাক্ষাত পায় না। এ নিয়ে আপনি বিতর্কের মধ্যে পড়ে গেছেন। মানুষের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কী না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র দল নির্বাচন চায়, এটা সত্যের অপলাপ। আমরা জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি করেছিলাম। নিয়মিত সরকার ছাড়া দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আসবে না, ভয়ের সংস্কৃতি যাবে না এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও হবে না। দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি, দেশে মবতন্ত্র কায়েম হয়েছে। যে কর্মকাণ্ডগুলো সরকার করছে, স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে যেসব তরুণ প্রাণ দিয়েছে, তাদের সঙ্গে এটা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। দেশকে সরকার আরেকটি বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।’

করিডোরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করিডোরের বিষয়টি খুবই সেনসিটিভি। এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত। রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন থেকে মুক্ত হোক, এটা আমরা চাই। কিন্তু এখানে করিডোর দিতে হবে কেন ? করিডোরের বিরোধিতা যখন এসেছে, এখন বলছে ত্রাণ চ্যানেল। দুইটার মধ্যে তফাৎ কী, এদেশের মানুষ বুঝতে পারছে না। মায়ানমারের জান্তা সরকারকে পাশ কাটিয়ে করিডোর দিতে গেলে দেশে একটা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হবে।’

‘এটা আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক লাইনের ভূরাজনীতি, তারা চীনকে ঘেরাও করতে চায়। আমরা কেন বাংলাদেশকে আমেরিকার ভূরাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি ? এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি হবে। এজন্য আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এটার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এই করিডোর, ত্রাণ চ্যানেল- এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।’

চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে শাহআলম বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর মোহনা ইজারা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এসএসএ সেখানে বন্দর গড়তে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা বামপন্থীরা সেদিন আপস করিনি। আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, হাইকোর্টে রীট করেছিলাম। পরে সরকার এসএসএ-কে পোর্ট করতে দেয়নি। এখনও বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর প্রতিবাদে আমরা মাঠে নেমেছি।’

‘আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব শ্রমিক-কর্মচারীদের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতে হবে। এখানে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে আনার প্রয়োজন নেই। কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও পরিচালনার প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা এখানকার শ্রমিক-কর্মচারীদের আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া। এসময় জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, মছি-উদ-দৌলা এবং ফরিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমপি

পুশইন সিপিবি সভাপতি শাহআলম