সিলেট: ভারতের মেঘালয় রাজ্যে টানা ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, কানাইঘাটসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে, ভারী বর্ষণে সিলেট নগরীর রাস্তাঘাট, আর শত শত বাসা-বাড়ি ডুবে গেছে।
শনিবার (৩১ মে) দুপুর থেকে হঠাৎ বদলে যায় সিলেট নগরীর চিত্র। পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক। দুপুর থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অতি প্রবল বৃষ্টিতে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও পিয়াইন নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইতিমধ্যে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সেই সঙ্গে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
শনিবার উপজেলার সারি, গোয়াইন ও পিয়াইন নদীর তিন পয়েন্টের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে জাফলং ডাউকি নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি ছিল। জাফলংয়ে ডাউকির পানি বৃদ্ধির কারণে পর্যটন স্পটের অস্থায়ী স্থাপনা ও পর্যটনকেন্দ্র ভেসে গেছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। শত শত বাসা-বাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেট বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর।
সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ রুদ্র তালুকদার সারাবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিলিমিটার।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলেও দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হচ্ছে, মূলত চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার জানান, টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদে বন্যা হতে পারে। তবে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখন হাওরে কোনো ধান নেই। ধান কাটা শেষ। তাই বন্যা হলেও ধানের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সীমান্তবর্তী উঁচু এলাকায় সবজির চাষ করা হচ্ছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানিতে সেগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
গোয়াইনঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সারওয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই মৌসুমি গবাদিপশু পালন করেন। বন্যা হলে তারা ভোগান্তিতে পড়বেন বেশি। ইতিমধ্যে গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে।
জাফলং পর্যটন স্পটের টুরিস্ট পুলিশের ওসি শাহাদাৎ হোসেন জানান, জাফলং প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে এবং পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বাড়ছে। টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যটকদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি আমরা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘সারি, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এটি যে কোনো মুহূর্তে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উজানের ঢলের পানি কয়েকদিন প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।’