Monday 02 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজিএমইএ নির্বাচন
৩৫ পরিচালক পদের ৩১টিতেই ফোরাম, নির্বাচিত হলেন যারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২৫ ০২:৩২ | আপডেট: ১ জুন ২০২৫ ০২:৩৮

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির নির্বাচনে জয়ী প্যানেল ফোরামের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরাম। ঢাকায় ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে ২৫ টিতে জয়ী হয়েছেন ফোরামের প্রার্থীরা। আর চট্টগ্রামে নয়টি পরিচালক পদের মধ্যে ফোরাম পেয়েছে ছয়টি। অর্থাৎ জয়ী ৩৫ জনের মধ্যে ৩১ জনই ফোরামের। সম্মিলিত পরিষদ থেকে জিতেছেন মাত্র চার জন। এবার ফোরাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিজিএমইএর পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন এই জোটের প্যানেল লিডার রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোট চলে বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত। পরে রাতে ফল ঘোষণা করা হয়। আগামী ২ জুন এই পরিচালকরা ভোট দিয়ে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন করবেন।

বিজ্ঞাপন

ফোরমের ঢাকা অঞ্চলের জয়ী ২৫ পরিচালক হলেন— রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু), এ. টি. এস. অ্যাপারেলস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, আদিবা অ্যাপারেলস এর পরিচালনা অংশীদার কাজী মিজানুর রহমান (পিন্টু), এমিটি ডিজাইন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান (বাবলু), এপিএস নিট কম্পোজিট লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো. হাসিব উদ্দিন, বাংলা পোশাক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল, কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ, দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভিদিয়া অমৃত খান ও দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল গ্রুপ) এর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিম (ফিরোজ)।

ঢাকা অঞ্চলের ফোরামের অন্য জয়ী পরিচালকরা হলেন— ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেড (ইভিন্স গ্রুপ) এর পরিচালক শাহ্‌ রাঈদ চৌধুরী, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিট লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মিজানুর রহমান, গোল্ডেন স্টিচ ডিজাইন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, হান্নান ফ্যাশনস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.বি.এম. সামছুদ্দিন, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস লিমিটেড এর পরিচালক নাফিস উদ দৌলা, যমুনা ডেনিমস লিমিটেড এর ডিরেক্টর মিসেস সুমাইয়া ইসলাম, লাকী স্টার অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ম্যাগপাই কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান, মাসকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (কম্পোজিট নিট গার্মেন্টস) এর পরিচালক ফাহিমা আক্তার, মুন রেডিওয়্যারস লিমিটেড (সেতারা গ্রুপ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসেফ কামাল পাশা, নেকসাস সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, রুমানা ফ্যাশন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমানা রশীদ, শাইনেস্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিহা আজিম, সফটেক্স কটন (প্রা.) লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রেজোয়ান সেলিম ও সুরমা গার্মেন্টস লিমিটেড এর পরিচালক ফয়সাল সামাদ।

আরও পড়ুন

ফোরামের বাইরে ঢাকায় ২৬ পরিচালকের মধ্যে সম্মিলিত পরিষদ থেকে বিজয়ী হয়েছেন একমাত্র বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালামও জিততে পারেননি। আর ফোরাম থেকে ঢাকায় একমাত্র পরাজিত হয়েছেন মাইশা ফ্যাশনস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া।

চট্রগ্রামে নয় পরিচালক পদে ফোরাম থেকে বিজয়ী হয়েছেন ছয়জন। চট্টগ্রাম থেকে ফোরামের বিজয়ী ছয় পরিচালক হলেন— কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান, ক্লিফটন অ্যাপারেলস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, ফ্যাশন ওয়াচ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালাম, এলার্ট ফ্যাশনস লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফ উল্যাহ মানসুর, চৌধুরী ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী ও এইচকে-টিজি গার্মেন্টস লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এনামুল আজিজ চৌধুরী।

আর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সম্মিলিত পরিষদের জয়ী তিন পরিচালক হলেন- প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল নেতা ও ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব ও এইচকেসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী।

এবারের নির্বাচনে ৩৫ পরিচালক পদে প্রার্থী ছিলেন ৭৬ জন। নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট এক হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ৬৩১ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ৩৭৭ ও চট্টগ্রামে ২৫৪টি ভোট কাস্ট হয়েছে, যা মোট ভোটারের প্রায় ৮৭ শতাংশ।

নির্বাচনে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী দেয়। বাকি ছয়জন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করছেন। নির্বাচনে এবার ভোটার ১ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার ১ হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামের ভোটার ৩০৩ জন। এবার গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটার কমেছে ৬৩২ জন, গত বছরের মার্চে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অুনষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার ছিল ২ হাজার ৪৯৬ জন। সেই নির্বাচনে ভুয়া ভোটার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ২০২৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে ৩৫ পরিচালক পদের বিপরীতে সব কটিতেই জয় পায় সম্মিলিত পরিষিদের নেতারা। পরে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবার নির্বাচনে গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটার কমে যায়।

এবারের নির্বাচনে ফোরামের দলনেতা রাইজিং ফ্যাশনস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু। এর আগে তিনি বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ও পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিটিএমএ ও বিকেএমইএ’র। আর সম্মিলিত পরিষদে এবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন চৈতি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। তিনি ২০১২-১৩ সালে বিজিএমইএর পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া, বাংলাদেশ বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ’র পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আবুল কালাম বর্তমানে সম্মিলিত পরিষদের সাধারণ সম্পাদকও।

প্রসঙ্গত, বিজিএমইএতে নির্বাচন কেন্দ্রিক দুটি প্যানেল- ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’। এই দুই প্যানেল থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চে বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের (২০২৪-২৬) নির্বাচনে সব ক’টি পদে জয়লাভ করে সম্মিলিত পরিষদ। গতবছর এই প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম মান্নান কচি। আর ফোরামের নেতৃত্বে ছিলেন বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি ও সুরমা গার্মেন্টসের সত্ত্বাধিকারী ফয়সাল সামাদ।

গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিজিএমইএ’র সভাপতি এস এম মান্নান কচি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অজ্ঞাতস্থান থেকে পদত্যাগ পাঠান। পরে বিজিএমইএ’র দায়িত্ব নেন ডিজাইনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম। খন্দকার রফিকের নেত্বত্বে পুনর্গঠিত বোর্ড পোশাক খাতের অস্থিতিশীলতা সামাল দিতে না পারায় ২০ অক্টোবর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

জয়ী পরিচালক ফোরাম বিজিএমইএ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর