সুনামগঞ্জ: জেলার ছাতকের মানিকপুর এখন লিচুর গ্রাম হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি। এই গ্রামের ছোট-বড় টিলায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে লিচুর বাগান। চলতি বছর বুম্বাই, চায়না থ্রি ও দেশি জাতের লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হলে লিচু চাষেই বদলে যেতে যেতে পারে এই দুর্গম গ্রামের অর্থনীতি।
সুনামগঞ্জ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছাতক উপজেলার মানিকপুর গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে এখন রসালো লিচুর সমাহার। ফলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই লিচুর গ্রামের আসেন। এখানকার বাগান থেকে তারা লক্ষাধিক টাকার লিচু কিনে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। আর এতে চাষিরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি বদলে যাচ্ছে অবহেলিত দুর্গম গ্রামের অর্থনীতি।
ভাগ্য বদলের আশায় নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের যুবক আব্দুল হামিদ দালালকে চার লাখ টাকা দিয়ে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিন বছরের বেশি শ্রম-ঘাম দিলেও ভাগ্য আর বদলায়নি। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে দেশে ফিরে আসেন মানিক। এর পর প্রায় ছয় মাস বেকার ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই লিচু চাষের চিন্তা মাথায় ঢোকে তার। পরে সামান্য পুঁজি দিয়েই শুরু করেন লিচু চাষ। মাত্র ১০ বছরে লিচুই ভাগ্য বদলে দিয়েছে হামিদের। তিনি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা এই বাগান থেকে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছি।’
হামিদের মতো সফলতার কাহিনি মানিকপুরের শতাধিক চাষির। প্রতিবছরই এখানে বাড়ছে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষের পরিধি। বিশেষ করে এই গ্রামে নব্বই দশকে শৌখিন কিছু মানুষ বাড়ির আঙিনায় লিচুর চাষ শুরু করেন। অন্য ফল-ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা তখন ঝুঁকতে থাকেন লিচু চাষের দিকে। তৈরি হতে থাকে লিচুর বাগান। বাড়ির আঙিনা, রাস্তার ধার থেকে শুরু করে মাঠে-ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে লিচুর চাষ। বর্তমানে লিচুই যেন বদলে দিয়েছে এখানকার মানুষের অর্থনীতির হালচাল। প্রতিকূল অবস্থা ও কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম করে চাষিরা তাদের উৎপাদিত লিচু বিপণন করে আসছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘লিচু চাষ করে চাষিরা যাতে বেশি লাভবান হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর ছাতকের এই গ্রামের ছয় হাজার লিচু গাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হবে।’