চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহন হিসেবে মনোরেল চালু করতে চান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ মডেলে এ প্রকল্প চালুর জন্য জার্মান ও মিশরের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ওরাসকম এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে চসিক।
রোববার (১ জুন) সকালে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান হয়েছে।
এতে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। এতে বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থায়ন করবে ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। বিনিয়োগের জন্য চসিকের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না। চসিক শুধু প্রয়োজনীয় ভূমি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে।
সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর এখন ওরাসকম কোম্পানি এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ নগরীতে ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে।
অনুষ্ঠানে মনোরেল প্রকল্পের অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও বাস্তবায়ন কাঠামো তুলে ধরেন আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী। তিনি জানান, এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্ট এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে মনোরেল চালুর জন্য তিনটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- নগরীর কালুরঘাট থেকে বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিটি গেট থেকে এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গিবাজার হয়ে শাহ আমানত সেতুর শহিদ বশরুজ্জামান চত্বর এবং অক্সিজেন মোড় থেকে মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালী হয়ে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত।
কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহন সংকট ক্রমবর্ধমান। মনোরেল একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। আমরা এ প্রকল্পে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। মনোরেল থেকে রাজস্ব আসবে শুধু টিকিট নয় বরং বিজ্ঞাপন, স্টেশনে দোকানপাট, আশপাশের সম্পত্তিমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমেও। একটি ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে ৫–৭ গুণ পর্যন্ত অর্থনৈতিক রিটার্ন পাওয়া যায়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার একের পর এক চেষ্টার মধ্যে ছিল এই শহরটাকে কীভাবে সুন্দর ও পরিকল্পিত করা যায়। কীভাবে ট্রাফিক জ্যাম কমানো যায়। আমরা ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়, স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। তবে মনোরেল এই সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ‘এই মনোরেল শুধু যানজট নিরসনে নয়, বরং চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব, পর্যটন ও ব্যবসাবান্ধব নগরীতে রূপান্তর করার দিকেও এগিয়ে নেবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযোগের একটি আধুনিক সেতুবন্ধন তৈরি করবে।’
চট্টগ্রামকে একটি ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ কাঠামোতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘পর্যটন নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাই। এই মনোরেল প্রকল্প তা বাস্তবায়নের পথে আমাদের অনেক এগিয়ে দেবে।’
অনুষ্ঠানে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট ও টেকসই নগরীতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে মনোরেল প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীকে নিয়ে একটি ইকোনমিক ফোরাম গঠন করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবো।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সদস্য সচিব নাজির শাহীন।
উল্লেখ্য, মনোরেল হলো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। মনোরেল এক চাকার ট্রেন।
এর আগে, ২০২১ সালের ৮ জুন নগরীতে মনোরেল চালু করতে চসিককে প্রস্তাব দিয়েছিল চীনা প্রতিষ্ঠান উইটেক। একই বছরের ১৯ মে মনোরেল চালুর প্রস্তাব করেছিল চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি টিম।