ঢাকা: বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছে জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ।
রোববার (১ জুন) এক বিবৃতিতে তারা জানান, বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রতি জনতা পার্টি বাংলাদেশ-এর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। গত শনিবার এক আলোচনা সভায় আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবির পাশাপাশি তিনি মন্তব্য করেছেন যে, ৫ আগস্টের পর আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না।
গত ২৫ এপ্রিল জন্ম নেওয়া জনতা পার্টি বাংলাদেশ মনে করে, বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি নির্ধারক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এই পর্যবেক্ষণটি দুঃখজনক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যযুক্ত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লংঘনও। কে কখন নির্বাচন চায়, এটি একান্তই দলীয় নিজস্ব বিষয়। যারা নির্বাচন সময়সীমা নিয়ে কিছু বলেনি, তারা সেই নির্বাচন তার মতো করে চায় কিনা, প্রসঙ্গে বর্হিভূতভাবে এই বিষয় সম্পর্কে বলাটা বাঞ্ছনীয় নয়। তার বক্তব্যের পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, ৫ আগস্টের পর জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দল নয়। অথবা তাদের জন্মই যেন আজন্ম পাপ। অথবা নতুন দলগুলো কেনো বিএনপি নির্বাচনী দাবির পিছু পিছু হাটছে না- এমন উষ্মা প্রকাশের মধ্য দিয়ে যেন তাদেরকে এ দাবিতে বাধ্য করার প্রয়াস।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা উদার নৈতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, বিপ্লব এবং গণঅভ্যুত্থানের পর ওইসব চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ একটি অনিবার্য বিষয়। স্বাধীনতার পর মহান যুদ্ধে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা আওয়ামী লীগের বাইরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। ৭৫ এর ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লবের পর বিএনপিসহ ৭০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন অধ্যাদেশের অধীনে নিবন্ধন নিয়েছিল।
আমরা বিস্মিত যে, একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে ইতিহাস স্রষ্টা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার দলের একজন কর্মকর্তার এরকম উপলব্ধি দুর্ভাগ্যজনক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যে দল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, সেই দর্শনের হালচাল সম্পর্কে আলোচনায় না যাওয়াই শ্রেয়। মূলত বিশ্ব-কাঁপানো সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা, মব জাস্টিস, পরমতের প্রতি অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা উসকে দেয়ার যে হীন প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা বিএনপি নেতৃত্বের ভগ্নাংশকেও গ্রাস করেছে। ড. ইউনূস কোন মহামানব নন, তিনি ছাড়া সবাই নির্বাচন চায়, অথবা পেশাবে ভাসিয়ে দেওয়া, এ ধরনের মন্তব্য তার প্রমাণ। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কিছু কিছু পর্যবেক্ষণ, কতিপয় উপদেষ্টার বাগাম্বর, জামায়াত এবং এনসিপির কোনো কোনো নেতার মন্তব্যও শিষ্টাচারের ব্যত্যয়।
জনতা পার্টি বাংলাদেশ একাত্তরের আদর্শ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় গঠিত একটি মধ্যপন্থী দল। আমরা অবশ্যই নির্বাচিত গণতন্ত্রে দ্রুত উত্তরণে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি, সংস্কার, ফ্যাসিবাদীদের বিচার এবং জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় সংকল্প।