ঢাকা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) ২৩ সদস্য।
রোববার (১ জুন) পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ৬৯ বছর বয়সী এই শিক্ষকের জামিন নামঞ্জুর ও কারাবন্দির ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও হতাশ।
ফোরামটি দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা উল্লেখ করে জানায়, প্রবীণ নারী হিসেবে আনোয়ারা বেগমের বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় নিয়ে জামিন প্রশ্নে বিশেষ বিবেচনা প্রাপ্য ছিল।
বিবৃতিতে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও যথাযথ বিচারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে এইচআরএফবি।
তবে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে জানায়, শত শত মানুষকে একযোগে আসামি করে গ্রেফতার ও বিচার ছাড়াই কারাবাসে পাঠালে মামলার ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
ফোরামটির মতে, অপরাধের অভিযোগ থাকলে তা প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু বিশেষ করে হত্যা মামলার মতো গুরুতর অভিযোগে নির্বিচারে গ্রেফতার বিচারপ্রক্রিয়ার পথেই বাধা সৃষ্টি করে।
বিবৃতিতে জানানো হয় যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়সাহেব বাজারের কাছে স্টার হোটেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে গুলি চালানো হয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে। তিনি বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সূত্রাপুর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা মামলার ঘটনার সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত বলে আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই)। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে আনোয়ারা বেগমকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সূত্রাপুর থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি চলমান মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচারের দাবীর বিষয়ে এইচআরএফবি তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে। কিন্তু এই মামলাগুলোতে বাছ-বিচার ছাড়াই কয়েকশত মানুষকে সন্দেহভাজন হিসেবে তালিকাভুক্ত, গ্রেফতার ও কারাগারে প্রেরণ করা হলে মামলাগুলো দুর্বল হয়ে যাবার আশংকা আছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে মামলাগুলো একটা সময়ে হয়রানিমূলক মামলা বলে প্রতীয়মান হতে পারে, যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিচারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এর ফলে প্রকৃত দোষীদের বিচারের সম্ভাবনা বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া কারো বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকলে সেটার জন্য নির্ধারিত আইনে তদন্তপূর্বক বিচার হতে পারে কিন্তু যত্রতত্র গ্রেপ্তারপূর্বক জুলাই হত্যা মামলায় কাউকে সম্পৃক্ত করলে জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে।
উল্লেখ্য, আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং ২০২১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ছিলেন। ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী এবং বয়োবৃদ্ধদের জামিনের বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন।